Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মোঘল যুগের গ্রামীন অর্থনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

মোঘল যুগের গ্রামীন অর্থনীতি

মোঘল যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ইওরোপীয় পর্যটকদের বিবরণ, সমকালীন ফার্সি ও আঞ্চলিক সাহিত্য, ‘বাবারনামা’, ‘হুমায়ুননামা’, ‘আইন-ই-আকবরী’ প্রভৃতি গ্রন্থ ও ইউরোপীয় বণিকদের লিখিত বিবরণ হতে বহু তথ্য জানা যায়।

মোঘল যুগের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি এবং রাষ্ট্রের রাজস্বের প্রধান উৎস। গ্রামে রায়তের মধ্যেও শ্রেণীভেদ ছিল।

স্বচ্ছল চাষী যে নিজের জমি নিজে চাষ করত, তাকে বলা হত ‘খোদকলতা’। ঠিকমত রাজস্ব দিলে এরা নির্বিবাদে জমি ভোগ করত। অনেক ক্ষেত্রে এরা অন্যদের দিয়ে ভাগে জমি চাষ করাত। দ্বিতীয় শ্রেণীর নাম ছিল ‘পাইকলতা’। অনেক সময় এদের নিজের জমি থাকত না। এরা বিভিন্ন জমিদারের জমি চাষ করত। এদের যাদের নিজের হাল-লাঙল ছিল তাদের ভাগের পরিমাণ ছিল বেশি। এরা ছিল বর্গা বা ভাগচাষী সম্প্রদায়। তৃতীয় শ্রেণী ছিল ‘মুজারিয়ান’। এরা ছিল ভাড়াটিয়া কৃষক। নির্দিষ্ট ভাগ আদায় দিয়ে এরা বাকিটা নিত। চতুর্থ শ্রেণী ছিল ভূমিহীন দিনমজুর বা বলাহার শ্রেণী।

মোঘল যুগে প্রধানত জমিতে রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের প্রচলন ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষকদের থেকে নির্দিষ্ট হারে নগদে রাজস্ব আদায়ের নিয়ম ছিল। তবে কর্মচারীরা দুর্নীতি পরায়ন হওয়ায় কৃষকদের ওপর নির্যাতন হত। এজন্য ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহ হয় এবং গোটা মোঘল আমল জুড়ে তা স্থায়ী হয়।

ইউরোপীয়রা বণিজ্যিক সূত্রে ভারতে আসায় গ্রামীণ অর্থনীতির চারিত্রিক কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। ভারত থেকে ইউরোপীয় বণিকরা প্রধানত ক্যালিকো, অন্যান্য সূতীর কাপড়, মসলিন, রেশমের সূতা, রেশমী কাপড়, নীল, গন্ধক, আফিম, লাক্ষা ও শৌখিন

হস্তশিল্পের দ্রব্য রপ্তানি করত। খাদ্যশস্যের মধ্যে চাল, গম, ডাল, তৈলবীজ, চিনি ও মশলা রপ্তানি করত। ইংরেজ কোম্পানি বাংলার তাঁতিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট দামে মাল কিনে নিত। একে ‘দাদন প্রথা’ বলা হয়। এর ফলে যজমানী প্রথা লোপ পেতে থাকে। অর্থনীতির চরিত্র পরিবর্তিত হয়।

মোঘল যুগের বহু রচনা থেকে জানা যায় যে, জিনিসপত্রের দাম বাজারে খুব কম ছিল। কিন্তু মুদ্রার প্রকৃত প্রচলন অজ্ঞাত ছিল ফলে প্রকৃত অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরা কঠিন। নিরন্তর যুদ্ধ-বিগ্রহ, সেনা চলাচলের ফলে কৃষকদের বহু ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করতে হত। চুরি, ডাকাতি মাঝে মাঝে হত।

মাঝে মাঝে দুর্ভিক্ষে বহু মানুষ মারা পড়ত। আকবরের আমলে ৬ বার এবং জাহাঙ্গিরের আমলে ২টি বড় দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। ঔরঙ্গজেবের আমল থেকে ক্রমিক অর্থনৈতিক অবনতি দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ শাকপাতা, শিকড় খেয়ে বেঁচে খাকত। পরিবারের অনেককে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করা হত; গ্রামগুলি জনহীন হত। কুটিরশিল্পীরা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হত বা তাদের জীবিকা পরিবর্তন করে কোনরকমে দিনপাত করত। কৃষক মৃত্যুর ফলে জমি পতিত থাকত। কৃষির ক্ষতি হত সর্বাধিক। কৃষির অবনতির ফলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিত। শহরগুলিতেও খাদ্য যোগান ঠিক না থাকায় ভয়ঙ্কর দুর্দশা দেখা দিত এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতির ফলে জাতির সম্পদ কমে যেত।

Leave a reply