আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার
রাষ্ট্রীয় কার্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সার্বভৌমিকত্বকে রূপায়িত করার প্রধান মাধ্যম হল— রাজনৈতিক অধিকার। আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
ক) ভোটদানের অধিকার
নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে ভোটদানের অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক ভোটদানের অধিকারী। এই অধিকারের মাধ্যমে নাগরিক সরকার গঠন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে। অবশ্য প্রতিটি দেশেই দেউলিয়া, বিকৃতমস্তিষ্ক এবং বিদেশিকে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
খ) নির্বাচিত হওয়ার অধিকার
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হওয়ার অধিকারী। অবশ্য প্রতিটি দেশেই আইনসভা, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান অথবা বিভিন্ন কাজে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা স্থির করা হয়।
গ) সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ
রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মসম্পাদনের জন্য এক বিশাল সংখ্যক কর্মচারীর প্রয়োজন, এই অধিকার অনুযায়ী জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক সরকারি কাজে নিযুক্ত হওয়ার অধিকারী। অবশ্য চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বিভিন্ন যোগ্যতা নির্ধারণ করতে পারে।
ঘ) সমালোচনার অধিকার
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে সংযত করা হয়। সরকার নাগরিকের স্বার্থ লঙ্ঘন করলে নাগরিক সরকারকে সমালোচনা করে। সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
ঙ) বিপ্লবের অধিকার
মার্কসীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিপ্লবের অধিকারকে একটি অন্যতম রাজনৈতিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেন। তাঁদের মতে, বৈষম্যমূলক সমাজে-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শোষিত শ্রেণি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অবশ্য অমার্কসীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিপ্লবের অধিকারকে স্বীকৃতি
দেননি।
ব্যক্তিত্ববিকাশের জন্য রাজনৈতিক অধিকারের গুরুত্ব সম্পর্কে দ্বিমত নেই। রাজনৈতিক অধিকারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র মূর্ত হয়ে ওঠে। সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত না-হলে রাজনৈতিক অধিকার বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .