উদারনৈতিক গণতন্ত্র হল এক বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এর মধ্যে উদারনৈতিক দর্শন, চিন্তা ও ভাবধারা প্রতিপন্ন হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উদারনৈতিক দর্শনের বাস্তবায়ন এর মূল লক্ষ্য। মোটামুটিভাবে সপ্তদশ শতাব্দীতে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার বিকাশ ঘটে। এই সাবেকী উদারনৈতিক গণতন্ত্রের দুটি মুলনীতি হল রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতা। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা এ দুটি নীতির স্রষ্টা হিসাবে পরিচিত।
উদারনীতিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
উদারনীতিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
১) উদারনৈতিক গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সাম্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
২) প্রকৃত প্রস্তাবে গণতন্ত্র হল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচারে পরিণত না হয় সেদিকে নজর রাখা হয়। এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় সংখ্যালঘিষ্ঠের স্বার্থ অবহেলিত হয় না।
৩) এধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিক জীবনের সমুদায় পৌর ও রাজনৈতিক অধিকার স্বীকার করা হয়।
৪) উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান মৌলিক আইন হিসাবে প্রাধান্য ও বিশেষ মর্যাদা লাভ করে।
৫) এধরনের শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য উদারনৈতিক গণতন্ত্রে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার কথা বলা হয়।
৭) উদারনৈতিক গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব স্বীকৃত।
৮) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
৯) উদারনৈতিক গণতন্ত্রে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার নাগরিকের অন্যতম পবিত্র মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য হয়।
১০) উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বৈপ্লবিক ও হিংসাত্মক উপায়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অধিকারের প্রচেষ্টাকে স্বীকার করা হয় না।
১১) জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রতত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে উদারনৈতিক গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রের পরিধি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
১২) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি উদারনৈতিক সরকারী সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
১৩) উদারনৈতিক গণতন্ত্র বহুলাংশে আমলাতান্ত্রিক রূপ ধারণ করে।
১৪) উদারনৈতিক গণতন্ত্রে সংবাদপত্র, বেতার প্রভৃতি গণসংযোগের মাধ্যমগুলির স্বাধীনতা স্বীকৃত।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .