গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সুবিধা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সুবিধাগুলি হল-
১) আদর্শবাদের সমর্থন
আদর্শবাদী বক্তব্য অনুসারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় যেখানে ব্যক্তি আত্মবিকাশের সর্বাধিক সুযোগ পায়। জনগণ নিজেরাই সরকার গঠন করে, নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে এবং স্বাধীনতা সৃষ্টি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। এইভাবে ব্যক্তি আত্মোপলব্ধির
পথে অগ্রসর হতে পারে এবং সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন সম্ভব হয়।
২) সর্বসাধারণের কল্যাণ
ল্যাস্কির মতানুসারে জনকল্যাণসাধন সরকারের লক্ষ্য হলেও রাষ্ট্রনৈতিক কর্তৃত্ব জনগণের হাতেই থাকা দরকার। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যে শ্রেণির হাতে থাকে, সেই শ্রেণির স্বার্থেই সরকার পরিচালিত হয়। গণতন্ত্রে রাষ্ট্রনৈতিক কর্তৃত্ব জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে। তাই এই শাসনব্যবস্থায় সর্বসাধারণের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়।
৩) রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার
গণতন্ত্রে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা যায়। এতে রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ ঘটে। রাজনৈতিক দলগুলি দেশের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান সম্পর্কে জনগণের কাছে নিজেদের নীতি ও পরিকল্পনা পেশ ও বিশ্লেষণ করে। বিরোধী দলগুলি সরকারী দলের কাজকর্ম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত রাখে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষও সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকে। জনগণ রাষ্ট্রনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়।
৪) সংঘর্ষ ও বিপ্লবের আশঙ্কা থেকে মুক্ত
গণতন্ত্র সংঘর্ষ বা বিপ্লবের আশঙ্কা থেকে মুক্ত, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্প্রীতি ও সৌলার সৃষ্টির আদর্শে অনুপ্রাণিত। গণতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস হল ব্যাপট এবং শাসনের ভিত্তি হল শাসিতের সংমতি। এই সরকারের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের পিছনে জনগণের নৈতিক অনুমোদন থাকে। তাই জনমনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। সরকারি কার্যক্রম জনমতের চাপে প্রভাবিত হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্রে সকল সমস্যার সমাধান করা যায়।
৫) সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কারণ এ ধরণের শাসনব্যবস্থা হল জনমত পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। জনমতের ভয়ে সরকার সাধারণত স্বৈরাচারী হতে পারে না।
পরিশেষে গণতন্ত্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সকল রকম বৈষম্যমূলক আচরণের পথ রুদ্ধ হয়; শাসক এবং বিচারকদেরও বৈষম্যমূলক ও অন্যায় কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হয়। গণতরে সকল ক্ষেত্রে জনগণই হল চূড়ান্ত বিচারক।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .