তত্ত্বগত দিক থেকে গণতন্ত্র হল আদর্শ ও সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্রেই গণতন্ত্রের প্রতি সমান আগ্রহ দেখা যায়। আদর্শগত বিচারে গণতন্ত্র হল প্রকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। তবে এর সাফল্যের জন্য কতকগুলি শর্ত পালন করা প্রয়োজন।
মিলের মত
জন স্টুয়ার্ট মিল (J.S.Mill) এর মতানুসারে গণতন্ত্রের সাফল্যের স্বার্থে তিনটি শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন :
১) জনগণের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করার ইচ্ছা থাকবে।
২) গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্তব্য পালনে জনগণ ইচ্ছুক ও সক্ষম হবে এবং
৩) গণতন্ত্রের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অপরিহার্য কার্যসম্পাদনে জনগণ সম্মত ও সমর্থ হবে। সুতরাং গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য জনগণের ইচ্ছা ও যোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গণতন্ত্রের সাফল্যের পাঁচটি শর্ত
১) গণতান্ত্রিক জনগণ
মিলের মতানুসারে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন হল গণতান্ত্রিক জনগণের (Democratic people)। গণতান্ত্রিক জনগণ বলতে গণতান্ত্রিক চেতনা ও দৃষ্টিসম্পন্ন নাগরিকদের বোঝায়। গণতান্ত্রিক চেতনা জনগণকে শাসনকার্যে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। এই চেতনার ভিত্তিতে নাগরিক সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করে এবং জনসাধারণের স্বার্থরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্যের স্বার্থে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও ভাবধারা সঞ্চারিত হওয়া দরকার। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হল সাম্য ও সমানাধিকার । তাই গণতান্ত্রিক জনগণকে এই আদর্শে অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত হতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তার সাফল্যের জন্য নাগরিকদের কাছে বিশেষ যোগ্যতা দাবি করে। এর পরিবর্তে নাগরিকরাও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান পায়।
২) যোগ্য নেতৃত্ব
গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত হল যোগ্য নেতৃত্ব। নেতৃত্ব উপযুক্ত হলে সমস্ত বাধাবিঘ্ন কাটিয়ে গণতন্ত্র সাফল্যের শিখরে পৌছোয়। কিন্তু নেতৃবৃন্দ যদি স্বার্থপর ও হীনমনোবৃত্তিসম্পন্ন হয়, তাহলে গণতন্ত্র তার ঈন্সিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারবে না।
৩) সৎ ও দক্ষ সরকারি কর্মচারী
গণতন্ত্রে শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কাজেই সরকারি কর্মচারীদের সততা, দক্ষতা ও নিয়মনিষ্ঠার ওপর গণতন্ত্রের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে।
৪) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব
গণতন্ত্র হল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। কাজেই সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থরক্ষার অধিক মনোযোগী হয়। সুতরাং আইনসভার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা না থাকলে গণতন্ত্র তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়, যা গণতন্ত্রের সাফল্যের পথে অন্যতম বাধা।
৫) শিক্ষার প্রসার
গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে সর্বজনীন শিক্ষার প্রসার একান্ত প্রয়োজন। কারণ, অশিক্ষিত জনসাধারণ নেতৃবৃন্দের বাক্চাতুর্যে সহজেই প্রভাবিত হয়।
পরিশেষে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য দেশবাসীকে সামাজিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন হাতে হাবে এবং ধর্মগত, ভাষাগত, সংস্কৃতিগত প্রভৃতি সর্বপ্রকার সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে, অন্যথায় গণতন্ত্র ব্যর্থ হতে বাধ্য।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .