সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শের উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র হল পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে ও সাম্যবাদে উত্তরণের এক অন্তবর্তীকালীন পর্যায়। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র বলতে বোঝায় জনগণের ব্যাপক অংশের গণতন্ত্র, মেহনতী মানুষের গণতন্ত্র। এ হল সর্বহারার গণতন্ত্র বা সর্বহারার একনায়কত্ব। সাম্য, স্বাধীনতা, মৈত্রী প্রভৃতি আদর্শগুলি এর মূলনীতি হিসাবে গণ্য হয়। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত হিসাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের শাসনব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে কতকগুলি অ-কমিউনিস্ট দেশও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই সমাজতন্ত্রের মৌলিক আদর্শগুলিকে বস্তুবে রূপায়িত করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন আদর্শগত পার্থক্যের অস্তিত্ব সত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়।
১) মার্কসীয় চিন্তাবিদদের মতানুসারে গণতন্ত্র এমন এক সমাজব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাম্য বর্তমান।
২) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে উৎপাদনের উপাদানসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।
৪) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে অর্থনৈতিক সাম্য ও স্বাধীনতা থাকে। এই কারণে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রেই ব্যক্তি স্বাধীনতা যথার্থ উপলব্ধির সুযোগ পাওয়া যায়।
৫) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে একটিমাত্র শ্রেণির অস্তিত্ব দেখা যায়। এই শ্রেণি হল শ্রমিক ও কৃষকদের সর্বহারা শ্রেণি। একাধিক শ্রেণি থাকে না বলে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে শ্রেণি-শোষণ বা শ্রেণি -দ্বন্দ্ব থাকে না।
৬) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব দেখা যায়। এই দল কমিউনিস্ট দল।
৭) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রাষ্ট্র শ্রম ও ভোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ‘প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুসারে কাজ করবে এবং কাজ অনুসারে ভোগ করবে।’— এই নীতির ভিত্তিতে এখানে বন্টনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৮) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের কাজ হল সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থরক্ষা করা।
৯) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রেই যথার্থ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ে উঠে।
১০) সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে সর্বহারার একনায়কত্বে এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা হয়। ক্রমশ এই রাষ্ট্রব্যবস্থা সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
উপসংহার
বস্তুত উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের কথা বলা হয়। মার্কসীয় দর্শনে গণতন্ত্রের ধারণাকে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করা হয়। কিন্তু উদারনৈতিক গণতন্ত্রের তত্ত্ব ও প্রয়োগকে সমর্থন করা হয় না। দাবি করা হয় যে, সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই প্রকৃত গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .