Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে পিছনে ব্রিটিশ সরকারের বিভেদমূলক নীতির ভূমিকা কী ছিল?

ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে পিছনে ব্রিটিশ সরকারের বিভেদমূলক নীতি

ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে ব্রিটিশের বিভেদমূলক নীতি অনেকটাই দায়ী ছিল। সুচতুর ব্রিটিশ শাসকগণ চেয়েছিলেন জাতপাত ও ধর্মে বহুবিভক্ত ভারতীয় সমাজে বিভাজন ও শাসন নীতি (Divide and Rule Policy)-র প্রযোগ ঘটিয়ে এদেশে তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে। এ প্রসঙ্গে বোম্বাই এর গভর্নর এলফিনস্টোন বলেছিলেন ভারতে ব্রিটিশ শাসন বজায় রাখার জন্য প্রাচীন রোমান সম্রাটের অনুসৃত বিভাজন ও শাসন নীতি প্রয়োগ করা দরকার।

প্রথম পর্ব – হিন্দু সাম্প্রদায়িক উত্থানে

জাতীয়তাবাদী চেতনায় হিন্দুত্বের প্রভাব হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছিল। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক, গবেষকগণ সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারত ইতিহাসের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। তারা ভারতের প্রাচীন যুগকে হিন্দুযুগ এবং মধ্যযুগকে মুসলিম যুগ হিসেবে অভিহিত করায় সম্প্রদায়িক ভাবনার জন্ম হয়। সিপাহি বিদ্রোহের পর থেকে ব্রিটিশ সরকার হিন্দু তোষণনীতির গ্রহণ করে। প্রথমদিকে ব্রিটিশ বিভেদনীতিকে হিন্দুদের স্বার্থে ও মুসলমানদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রয়োগ করত। একথা স্বীকার করে নিয়ে লর্ড এলেনবরা বলেছিলেন— মুসলিম জনসমাজ মৌলিকভাবে আমাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, তাই আমাদের আসল লক্ষ্য হবে হিন্দুদের সঙ্গে যোগাযোগ ভাড়ানো।

দ্বিতীয় পর্ব— মুসলিম সাম্প্রদায়িক উত্থঅনে

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ব্রিটিশের বিভেদমূলক নীতির স্বরূপ পালটাতে থাকে। হিন্দু তোষণের নীতি থেকে সরে এসে ব্রিটিশ মুসলিম সমাজ অশিক্ষা ও বেকারত্বে ডুবে রয়েছে। তাই মুসলিমদের প্রতি ব্রিটিশ নীতির পরিবর্তন করা দরকার। (i) লর্ড মেয়ো মুসলিমদের একাংশকে বিভেদ নীতির প্রতি উৎসাহী করে তোলার জন্য ভারতকে ‘দার-উল-ইসলাম’ এর পরিবর্তে ‘দার-উল-হার্ব’ বা শত্রুর দেশ বলে প্রচারে উসকানি দেন। (ii) লর্ড রিপন এক সংস্কার আইন (১৮৮২ খ্রি.) প্রবর্তনের মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য আলাদা নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনে মুসলিমদের আরও বেশি করে সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। (iii) লর্ড ডাফরিন মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে বলেন – পাঁচ কোটি মানুষ নিয়ে তারা নিজেরাই একটি জাতি, একটি খুব শক্তিশালী জাতি।

তৃতীয় পর্ব— মুসলিম সাম্প্রদায়িকতায় প্রত্যক্ষ মদত

(১) বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের মাধ্যমে

সাম্রাজ্যবাদী কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের মাধ্যমে এই প্রথম সরাসরি মুসলিমদের কিছু সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নীতি ঘোষণা করে। আসলে কার্জন বাঙালির জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের লক্ষ্যে বঙ্গ বিভাজন নীতি গ্রহণ করলেও এতে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করা হয়। তাই দেখা যায়, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চলার সময় মুসলিম সরকারের পক্ষ নেয় এবং লিগের প্রত্যক্ষ মদতে বাংলায় বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটলেও ব্রিটিশ নিশ্চিন্তেই থাকে।

(২) মর্লে-মিন্টো সংস্কারের মাধ্যমে

মুসলিম সম্প্রদায়কে নিজেদের পক্ষে ধরে রাখার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার(১৮০৯ খ্রিঃ) প্রবর্তন করে। এই শাসন সংস্কারের দ্বারা ব্রিটিশ মুসলিমদের জন্য আলাদা নির্বাচনের তার ব্যবস্থা করে। স্থির হয় মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলিতে মুসলিম ভোটাররাই মুসলিম প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন। মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কারের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই হিন্দুদের একাংশ কিন্তু মহাসভা প্রতিষ্ঠা করলে ব্রিটিশের ভেদনীতি জয়যুক্ত হয়।

(৩) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির মাধ্যমে

দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে মীমাংসা না হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি. আগস্ট) ঘোষণা করেন। এই নীতির মাধ্যমে মুসলিমসহ ভারতের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আলাদা নির্বাচনের দাবি মনে নেওয়া হলে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই জয় ঘোষিত হয়।

(৪) ঔপনিবেশিক অর্থনীতির মাধ্যমে

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অর্থনীতি সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটিয়েছিল বলা বলে। পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগ নিয়ে হিন্দুরা যখন একের শাঁ পর এক সরকারি উচ্চপদগুলি দখল করে নিচ্ছে এবং ব্রিটিশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্যাবসাবাণিজ্যে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে ঠিক সে সময়ে ব্রিটিশের তরফে শিক্ষিত হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের দুরত্ব তৈরির চেষ্টা করে ব্রিটিশ। মুসলমানদের বোঝানো হয়, ব্রিটিশের প্রতি অনুগত থাকলে সরকারি চাকুরি এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধার দিক থেকে মুসলমানরা লাভবান হবে। ব্রিটিশের এই চাতুরি সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে মদত জোগায়। লালাগু

উপসংহার

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্রিটিশ বিভেদমূলক নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটায়। আসলে ব্রিটিশ বিভেদমূলক নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে গড়ে ওঠা জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়ে এদেশে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে চেয়েছিল। কখনো হিন্দুদের, কখনো মুসলিমদের কাছে টেনে এনে দূরে সরিয়ে দিয়ে ব্রিটিশ তার সাম্রাজ্যবাদী কায়েমি স্বার্থ তীবজায় রাখতে চেয়েছিল। ভুদেব মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘সামাজিক প্রবন্ধতে লেখেন— “ইংরেজ কৌশল করিয়া কখনো মুসলমান অপেক্ষা হিন্দুদের একটি অধিক আয় করেন এবং যখন হিন্দু আদরে ভুলিয়া যায়, তখনই আবার মুসলমানদের দিকে
বিলক্ষণ ঝোঁক দেন।”

Leave a reply