Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের কৃষক আন্দোলন এর ওপর একটি নিবন্ধ লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের কৃষক আন্দোলন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারায় অংশগ্রহণ করা ছাড়াও কৃষকরা নিজেদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে আলাদাভাবে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলনে শামিল হয়েছে। এইসব কৃষক আন্দোলনগুলি কৃষকের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি জাতীয় আন্দোলনকেও মজবুত করেছে।

ভারতের বিভিন্ন স্থানের কৃষক আন্দোলনের পরিচয়

বাংলা

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে কৃষকরা ইউনিয়ন বোর্ড বয়কট করে। এ ছাড়াও তারা চৌকিদারি কর দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ব্রিটিশ পাবনা, বাগুড়া, বীরভূমে জমিজরিপ করে অজানা নির্ধারণের কাজ শুরু করলে স্থানীয় কৃষকরা তাতে বাধা দেয়। কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরে কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়। বাংলায় ফজলুল হক ও আক্রাম খাঁর উদ্যোগে গঠিত হয় কৃষক প্রজা পার্টি। বঙ্কিম মুখার্জীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বর্ধমানের কৃষকরা দামোদরের খালের জলের ওপর চাপানো বর্ধিত করের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

বিহার

বিহারেও একের পর এক কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্বে দ্বারভাঙা, মজফ্ফরপুর, ভাগলপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গেরের কৃষকরা কর দেওয়া বুদ্ধ করে। বিহার কিষান সভা ও সারা ভারত কিষান সভার প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী বিহারে বেশ কিছু কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন। বিহারের পাটনায় লক্ষাধিক কৃষকের সমাবেশে (১৯৩৮ খ্রিঃ) জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটানোর দাবি ওঠে। এছাড়াও বেআইনি কর আদায় ও জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।

উত্তরপ্রদেশ

উত্তরপ্রদেশে বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে প্রতাপগড়, রায়বেরিলি সুলতানপুর ও ফৈজাবাদের কৃষকরা জমিদারদের বিরুদ্ধে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে (১৯২০খ্রিঃ)। এই কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে জওহরলাল নেহরু গঠন করেন উত্তরপ্রদেশ কিষাণ সভা।

যুক্তপ্রদেশ – কেতা বিদ্রোহ

যুক্তপ্রদেশে সীতাপুর, বরাইচ, বারাবাঁকি প্রভৃতি অঞ্চলে কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে শুরু হয় একতা নামক কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে মাদারি পাশির নেতৃত্বে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নেয়। জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে যুক্তপ্রদেশে কংগ্রেস কমিটি কৃষকদের স্বার্থে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মধ্যে অন্যতম জমির খাজনা হ্রাস, জমি থেকে প্রজাদের উচ্ছেদ নিষিদ্ধকরণ, কৃষকদের কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি। আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনের নেতারা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।

মালাবার-মোপাল বিদ্রোহ

অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার অঞ্চলে যে কৃষক বিদ্রোহ ঘটে তার নাম মোপালা বিদ্রোহ। অস্পষ্ট প্রজাস্বত্ব আইন এবং জমিদারদের তীব্র শোষণের বিরুদ্ধে মোপালার কৃষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হয়। এরপর থেকে একে মালাবারের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক কৃষক সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠনগুলির নেতৃত্বে মোপালা কৃষক বিদ্রোহ সুসংহত ও তীব্র রূপ ধারণ করে। মোপালার কৃষকরা ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। তারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে, এমনকি পুলিশ চৌকি আক্রমণ করে। শেষের দিকে এই বিদ্রোহ রূপ সাম্প্রদায়িক নেয়। অবশেষে উগ্র দমন নীতির দ্বারা সরকার এই আন্দোলনের অবসান ঘটায়।

গুজরাত – বারদৌলি কৃষক সত্যাগ্রহ

গুজারাটের সুরাট জেলার অন্তর্গত বারদৌলির কৃষকরা জমিদারের অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। এই বারদৌলি কৃষক সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। বারদৌলিতে সরকার শতকরা ৩০ ভাগ রাজস্ব বাড়ালে সর্দার প্যাটেল হিন্দু কৃষকদের গীতা ও মুসলিম কৃষকদের কোরান ছুঁইয়ে খাজনা না দেওয়ার শপথ গ্রহণ করান। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বের জন্য পারদৌলির মহিলারা তাঁকে ‘সর্দার’ অভিধায় ভূষিত করে। আন্দোলনের তীব্রতায় শেষ পর্যন্ত সরকার কৃষকদের সঙ্গে মীমাংসায় বসতে বাধ্য হয়।

অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ-রুম্মা বিদ্রোহ

আল্লুরি সীতারাম রাজুর নেতৃত্বে অন্ত্রের গোদাবরী জেলার রুম্মা নামক অধিবাসীরা সশস্ত্র বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কৃষকরা গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ শুরু করে। মহাজনের শোষণ ও জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা সরব হয়। সরকার তাদের অরণ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে এবং রাস্তা তৈরির কাজে বেগার খাটালে এই বিদ্রোহ ঘটে। ব্রিটিশ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মালাবার স্পেশাল পুলিশ বাহিনী ও অসম রাইফেল এর সাহায্যে এই
বিদ্রোহ দমন করে।

মূল্যায়ন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন অংশে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলনগুলিকে সুসংহত রূপ দেওয়া ও ঐক্যবদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় একাধিক কিষাণ সভা। এই লক্ষ্যে কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্টরা মিলে প্রতিষ্ঠা করে সারা ভারত কিষান কংগ্রেস (১৯৩৬ খ্রিঃ ১১ এপ্রিল)। পরে মাযার নাম হয় সারা ভারত কিষান সভা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মূলত কৃষক আন্দোলনের নিয়ন্ত্রক ছিল কংগ্রেস ও বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মূলত কৃষক আন্দোলনগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ।

Leave a reply