Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মন্ত্রী মিশন (১৯৪৬ খ্রিঃ) ও তার প্রস্তাব কী ছিল?

মন্ত্রী মিশন

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্তিম পর্যায়ে নৌ-বিদ্রোহ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতিদের বিচারককে কেন্দ্র করে গণ-আন্দোলন, ধর্মঘট প্রভৃতি ঘটনাবলী ব্রিটিশ সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এই সময় একদিকে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের আগুন সম্প্রসারিত হয়, অন্যদিকে মুসলিম লিগ ধর্মের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে অবিচল থাকে। এই উদ্বেগজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৪৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী এট্‌লি ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিন সদস্যের এক মিশন পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন। এই মিশন ক্যাবিনেট মিশন নামে পরিচিত হয়।

মিশনের সদস্যবর্গ

মন্ত্রী মিশনের তিন সদস্য ছিলেন— ভারত সচিব প্যাথিক লরেন্স, স্যার স্যাফোর্ড ক্রীপস ও এ.ভি. আলেকজান্ডার। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে মার্চ মন্ত্রী মিশন ভারতে এসে পৌঁছান।

দায়িত্ব ও কর্তব্য

ভারতে পৌঁছেই মিশনের সদস্যরা কংগ্রেস, মুসলিম লিগ ও অন্যান্য ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করে। তবে মূল আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সঙ্গে। ব্রিটিশ যন্ত্রী মিশনের সঙ্গে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে জিন্না আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। জিন্না ভারত বিভাগ করে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে অটল থাকেন। অন্যদিকে কংগ্রেস দেশ বিভাগের প্রস্তাবের প্রবল বিরোধিতা করে এবং অখন্ড ভারতের দাবিতে অনড় থাকে। এই অবস্থায় মন্ত্রী-মিশনের প্রধান কাজ ছিল, দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক ও মুসলিম লিগের দাবিগুলো ভালো করে পর্যালোচনা করে মন্ত্রী মিশন নিজস্ব একটি প্রস্তাব পেশ করে। নিজস্ব পরিকল্পনা ঘোষণা করেন (১৬ মে,১৯৪৬ খ্রিঃ)।

প্রস্তাব

মন্ত্রী শিনের মূল প্রস্তাবগুলো ছিল—

  1. স্বাধীনতার পর ভারত হবে একটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের সমস্ত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্য এই যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে।
  2. প্রস্তাবিত এই যুক্তরাষ্ট্রের একটি কেন্দ্রীয় আইনসভা ও কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে।
  3. সমস্ত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় আইন সভায় যোগ দিতে পারবে।
  4. কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করা হবে। দেশের পররাষ্ট্র নীতি, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে। এই কয়েকটি দপ্তর ছাড়া বাকি সমস্ত বিষয়ের দায়িত্ব থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
  5. ভারতের ছটি হিন্দু প্রধান প্রদেশকে (যেমন— বোম্বাই, মাদ্রাজ, বিহার, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ) ‘ক’শ্রেণিতে এবং বাংলা ও আসাম প্রদেশকে ‘গ’ শ্রেণিতে ভাগ করা হবে।
  6. এই তিনশ্রেণিভুক্ত প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ভারতীয় সংবিধান রচনার জন্য একটি গণ-পরিষদ গঠন করা হবে। সাম্প্রদায়িক নীতির ভিত্তিতেই গণ-পরিষদ ও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
  7. নতুন সংবিধান অনুসারে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর যে কোনো প্রদেশ যে কোনো ভাগ থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
  8. নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।

প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া

মন্ত্রী মিশনের সুপারিশগুলি কংগ্রেসকে খুশি করতে পারেনি। মিশন কংগ্রেসকে এই আশ্বাস দেয় যে অন্তবর্তীকালানি সরকার ও সংবিধান সভাকে যথাসম্ভব স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। মিশনের এই আশ্বাসে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পহেল

অন্যদিকে, যদিও মিশন মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রেরদাবি সরাসরি স্বীকার করে নেননি, তবুও এই পরিকল্পনা ‘পাকিস্তান’ গঠনের সহায়ক বিবেচনা করে মুসলিম লীগ তা গ্রহণ করে নেয়। মুসলিম লীগ অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য লর্ড ওয়াভেলের ওপর চাপ দিতে থাকে। কিন্তু কংগ্রেস সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত ওয়াভেল সেই সরকার গঠনে অসম্মত হন। এতে মুসলিম লীগ অসন্তুষ্ট হয়ে মন্ত্রী মিশনের সিদ্ধান্ত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেয়।

এইভাবে মন্ত্রী মিশনের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতিতে রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার সূচনা হয়।

মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবের ইতিবাচক ও নেতবাচক দিক

ইতিবাচক দিক

মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবে অখন্ড ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের পরস্পর বিরোধী দাবির মধ্যে মোটামুটি সামঞ্জস্য বিধান করার চেষ্টা করা হয়।

ঐতিহাসিক বি এন পান্ডের মতে, ‘The Cabinet Mission Plan was the best that could be devised to maintain the Unity of India at the cretical period in Indian history’

নেতিবাচক দিক

মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবকে ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না, কারণ—

  1. মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রাদেশিক সরকারের তুলনায় দুর্বল  এবং করার ফলে প্রসাবিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো অনেকটা কমজোরি ও দুর্বল হয়ে যায়
  2. এই প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে ভারত বিভাগের সম্ভাবনা অনেকটা মেনে নেওয়াহয়। অবশ্য মন্ত্রী মিশনের কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং এই প্রস্তাবের সাফল্য ও ব্যর্থতা সবটুকুই কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছিল।

Leave a reply