Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন এর উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন

ভূমিকা

বিংশ শতকের প্রথমে ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার-অনাচার ও কংগ্রেসের আবেদন নিবেদনশীল নীতির প্রবর্ত হিসেবে সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়। এই জাতীয়তাবাদই সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে। ভারতের সর্বপ্রথম মহারাষ্ট্রেই বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা।

(১) বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা করেন বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে (১৮৪৫-৮৩ খ্রিঃ) । তিনি ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের লক্ষ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ গ্রহণ করেন। ফাদকে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতেগিয়ে বলেন, “শয়নে, স্বপনে, নিদ্রায়, জাগরণে আমার একটিই চিন্তা—ব্রিটিশদের ধ্বংসসাধন”।

এই উদ্দেশ্যে ফাকে কোলি, রামোজি প্রভৃতি অনুন্নত উপজাতি সম্প্রদায়ের তরুণদের নিয়ে একটি গুপ্ত সমিতিগঠন করেন ও তাদের অস্ত্রচালনায় প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল সরকারি কোষাগার লুঠ করা, ডাক ব্যবস্থা ও রেল চলাচল স্তব্ধ করা এবং জেল ভেঙে বন্দিদের মুক্ত করে নিজের পথে নিয়ে আসা। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর বিপ্লবী কার্যকলাপ সরকারের নজরে আসে এবং বহু চেষ্টার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে ফাদকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

ফাদকের প্রাথমিক বিপ্লবী-প্রয়াস ব্যর্থ হয় বটে, কিন্তু তাঁর নির্দেশিত বিপ্লবের আদর্শ ব্যর্থ হয়নি। এইজন্য ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁকে “ভারতের বিপ্লববাদী সংগ্রামের জনক” বলে অভিহিত করেছেন।

(২) লোকমান্য তিলকের কার্যকলাপ

ফাদকের পরবর্তী সময়ে মহারাষ্ট্রের জনগণের মনে জাতীয়তাবাদী তথা বিপ্লবী চেতনাসঞ্চারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন লোকমান্য তিলক। সাধারণ মানুষের মনে সংগ্রামী মনোভাব সঞ্চারের উদ্দেশ্যে তিনি ‘গণপতি ও শিবাজী উৎসব’ এর আয়োজন করেন। তাছাড়া মারাঠা ও কেশরী নামে দুটি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি যুবকদের মনে বিদ্রোহের আগুন সঞ্চার করেন। এমনকি তিনি জনগণকে খাজনা না দেওয়ারও আহ্বান জানান।

(৩) চাপেকার ভাইদের ভূমিকা

তিলকের ভাবাদর্শে মহারাষ্ট্রে বিপ্লবী তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই সময় দামোদর চাপেকার ও বালকৃষ্ণ চাপেকার নামে দুই ভাই বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে চাপেকার ভ্রাতৃদ্বয় পুণের ম্যাজিস্ট্রেট র‍্যান্ড ও একজন সামরিক কর্মচারীকে হত্যা করেন। বস্তুত এটিই হল আধুনিক ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী হত্যাকান্ড। পরবর্তী সময়ে তাঁরা ধরা পড়েন ও প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন।

(৪) বালসমাজের ভূমিকা

বিপ্লবী আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে ‘বালসমাজ’ নামে একটি গোপন সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতি বালক ও ছাত্রদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠতে সাহায্য করে। ওয়ার্ধা, নাগপুর, অমরাবতী প্রভৃতি শহরে এই গুপ্ত সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৫) আর্যবান্ধব সমাজের ভূমিকা

বালসমাজের পাশাপাশি ‘আর্যবান্ধব সমাজ’ নামে আরও একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংস্থার লক্ষ ছিল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ব্রিটিশ শক্তিকে উৎখাত করা। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে আর্যবান্ধব সমাজ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করেব্যর্থ হয়। কিছুদিনের মধ্যে মহারাষ্ট্রে লোকমান্য তিলক এবং পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায় ও ভাই পরমানন্দ আর্যবান্ধব সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। বাংলার বিপ্লবীরাও আর্যবান্ধব সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

(৬) বিনায়ক দামোদর সাভারকারের ভূমিকা

মহারাষ্ট্রের অপর এক বিপ্লবী নেতা ছিলেন গণেশ সাভারকর ও তাঁর ভাই বিনায়ক দামোদর সাভারকর (১৮৮৩-১৯৬৬ খ্রিঃ) । তাঁরা ‘মিত্রমেলা’ নামে একটি সমিতি গঠন করে তরুণদের দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন। চরুণদের অস্ত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা যত্নশীল ছিলেন।

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘অভিনব ভারত’ নামে এক বিপ্লবী সমিতি গঠন করে দেশের নানা স্থানে তার শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে দেন। ১৯০৬ সালে বিনায়ক লন্ডনে চলে যান এবং গোপনে ভারতে অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে থাকেন। তাঁর অনুগামী মদনলাল ধিংড়া ইংল্যান্ডে স্যার কার্জন উইনিকে হত্যা করেন। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে সাভারকর গ্রেপ্তার হন। বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

(৭) রাসবিহারী বসুর ভূমিকা

১৯১৪-১৫ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে আবার বিপ্লবী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। তাঁর অন্যতম সহযোগী বিপ্লবী বিষুগণেশ পিংলে মীরাটের সেনা ছাউনিতে কয়েকটি তাজা বোমাসহ গ্রেপ্তার হলে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর প্রাণদণ্ড হয়।

মূল্যায়ন

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবীদের আদর্শ সর্বভারতীয় বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে। সরকারি দমননীতি, অত্যাচার, বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিপ্লবীদের মধ্যে মতভেদ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মহারাষ্ট্রের বিপ্লববাদে কার্যত ছেদ পড়ে। তথাপি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের নিম্নলিখিত অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।

(১) মহারাষ্ট্রের বিপ্লবীদের স্বদেশ প্রেম ও আত্মত্যাগ সমগ্র দেশবাসীর মনে উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিল।

(২) মহারাষ্ট্রের বিপ্লবীদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করে।

(৩) সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যু হলেও তাদের আদর্শের মৃত্যু হয় নি। সে কারণেই অধ্যাপক সুমিত সরকার তাঁদের ব্যর্থতাকে মহান বলে অভিহিত করেছেন।

(৪) আলোচনার শেষ পর্বে একথা বলা যায় যে, মহারাষ্ট্রের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অনুকরণেই বাংলা ও পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই বিপ্লবী চেতনা পরবর্তীকালে বামপন্থী আন্দোলনের জন্ম দেয়।

Leave a reply