গুপ্তযুগের সামাজিক অবস্থা
১) পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় গুপ্তযুগে বহুমুখী সামাজিক রূপান্তর ঘটে যেমন- এইযুগে উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম ভারতে বহু সংখ্যায় বিদেশী অনুপ্রবেশের ফলে ভারতীয় সমাজজীবনে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে অবশ্য এই বিদেশীদেরও ব্রাত্য-ক্ষত্রিয় হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতি সমস্যার আংশিক সমাধান করা হয়।
২) গুপ্তযুগে সমুদ্র পথে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিশেষ প্রসার ঘটলেও এযুগের ব্রাহ্মণ প্রভাবিত স্মৃতিশাস্ত্রগুলোতে সমুদ্রযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়েছিল এবং এই জন্য প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেওয়া হয়েছিল। এইসব ধর্মীয় নিষেধের ফলে বৈশ্য সম্প্রদায়ের বাণিজ্যসম্পদ ও অর্থনৈতিক শক্তি সংকুচিত হওয়ায় বৈশ্য সম্প্রদায়ের দুর্দশা বেড়েছিল।
অন্যদিকে কৃষি ও কারুশিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই যুগে শুদ্রদের আর্থিক অবস্থা আগের মতো অতটা খারাপ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, গুপ্তযুগে দরিদ্র বৈশ্য ও শূদ্রের সামাজিক অবস্থানের মধ্যে কোনো বিশেষ পার্থক্য ছিল না।
৩) গুপ্তযুগেও সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের স্থান ছিল সর্বোচ্চ স্তরে। এই যুগে কোনো কোনো ব্রাহ্মণ অব্রাহ্মণোচিত বৃত্তি গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ ব্রাহ্মণই ধর্মীয় ও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত না। সমকালীন যুগের কাত্যায়ন স্মৃতি থেকে জানা যায় যে, সে যুগে নির্বাসন ছিল ব্রাহ্মণদের সর্বোচ্চ শাস্তি। ক্ষত্রিয়রাও তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য সমাজে মর্যাদার পাত্র ছিলেন। সাধারণভাবে এই দুই উচ্চবর্ণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও কোনো কোনো সময় এর ব্যতিক্রমও ঘটত।
৪) বিবাহ : বিভিন্নবর্ণের মধ্যে বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। বহু বিবাহ সমাজে প্রচলিত ছিল। মেয়েদের বাল্যবিবাহ অভিপ্রেত ছিল।
৫) নারীর স্থান : উচ্চ পরিবারে নারী শিক্ষার প্রচলন ছিল। স্বয়ম্বর প্রথা ও সতীপ্রথা প্রচলিত ছিল দেবদাসীদের অস্তিত্ব ছিল, তবে মেয়েদের বিবাহিত জীবন সুখকর ছিল না।
৬) দাস ব্যবস্থা : মনু বিভিন্ন শ্রেণীর দাসের উল্লেখ করেছেন।
৭) শিক্ষা ব্যবস্থা : গুপ্তযুগে গুরুগৃহ কেন্দ্রিক এবং প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শিল্প ব্যবস্থা চালু ছিল এই যুগে শিক্ষার জন্য প্রচুর অনুদানের ব্যবস্থা ছিল শিক্ষা লাভে ছাত্রের প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র তার মেধার উপর নির্ভর করত।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .