Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মহাকাব্যের যুগের নারী।

মহাকাব্যের যুগের নারী।

রচনাকালের দিক দিয়ে দেখলে রামায়ণ খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় বা দ্বিতীয় থেকে খ্রীষ্ট্রীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে রচিত। মহাভারত রচনা সম্ভবত শুরু হয় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চম শতকের মধ্যে রচিত হয়। অর্থাৎ এই সময়ের নারীর অবস্থা জানা যায় মহাকাব্য থেকেই। প্রথমে রামায়ণ দেখা নারী অবস্থা কেমন ছিল। কৈকেয়ীর সাহস হয় রাজার পূর্ব প্রতিজ্ঞায় বদ্ধ করতে, লক্ষণ বনগমন করলে ও স্ত্রী উমিলা প্রাসাদেই রহিলেন। দশরথের মৃত্যুর পর রানীরা সতী হলেন না আবার মন্দোদরী বার বার স্বামী (রাবণেব) নিন্দা করছেন অন্যায় কাজের জন্য। এর থেকে মনে হয় এই সময় নারী যথেষ্ট স্বাধীন ছিলেন নিজ কর্তব্যের জন্য।

সীতা প্রাচীনতর উপাখ্যানের নায়িকা যিনি পতিব্রতা বলে নয় রামকে ভালোবাসতেন বলেই স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে বনে গিয়েছিলেন। আবার ইহজগতে ও পরলোকে সর্বদাই পতিই হল নারীর একমাত্র গতি। পতিহীনা নারী শতপুত্রের জননী হলেও সুখ পায় না।

নারীর একটি গতি হল স্বামী। এই পুরুষ নির্ভরতাও রামায়ণের ছত্রে ছত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার সতীত্ব রক্ষার জন্য নারীকে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হত। নারী রামায়ণের যুগে রাজসুখ পেলেও সম্মান কোনদিনই পায় নি। নারীর সামান্যতম দোষ সমাজ ক্ষমা করত না। পতি নারীর একমাত্র গতি, তাই স্ত্রীকে সন্দেহ করবার অধিকার এবং সন্দেহ বশে স্ত্রীকে ত্যাগ করবার অধিকার, নিরপরাধিন নারীকে দন্ড দেবার অধিকার পতিদের ছিল। এর থেকে মনে হয় সামাজিক কোন মূল্য সে যুগে নারীর ছিল না।

আদি ক্ষত্রিয় কাহিনী যখন গাথারূপে রচিত হয় সেই প্রাচীন যুগের নারীর কিছুটা স্বাধীন সঞ্চারণের ও আচরণের কিছু চিহ্ন মহাভারতে রয়ে গেছে। যেমন গান্ধারী ও দ্রৌপদী রচিত। মহাভারতে নারীর সোমপান করেন, প্রকাশ্যে চলাফেলা করেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেন। অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত পুরুষের সঙ্গে মিলিত হন। দ্রৌপদী বিবাহের সময় বহু বাদ-প্রতিবাদ করেন। আবার সে যুগের নারীরা বহু পতিক গ্রহণ করতেন এমন প্রমাণও পাওয়া যায়। আবার উল্টোদিকে মহাভারতে কামনায় প্রণোদিত হয়ে নারী পুরুষের মিলনের বিরুদ্ধে বিস্তর নিষেধ রয়েছে। ব্যভিচারে অপরাধে নারী পুরুষের সমান দত্তের কথা আছে। মহাভারতের মধ্যভাগ থেকে দেখা গেল নারীর স্থান সমাজে অনেক নেমে গেছে – বলা হল “নারী নরকের দ্বার”। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় শান্তিপর্বে মুমূর্ষু ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলছেন “নারী চেয়ে অশুভতর আর কিছুই নেই নারীর পতি পুরুষের কোন স্নেহ মমতা থাকা উচিত নয়। নারী সর্পের মত, পুরুষ তাকে কখনই বিশ্বাস করবে না।”

বহু স্থানে সতী নারীর প্রশংসা আছে আবার গৃহিনীর ভূমিকায় সার্থকতায় পুণ্য আছে। বিবাহিতা নারী শিবিকায় আরোহণ করতেন অন্তঃপুরে বসনে আবৃত অবগুষ্ঠিত হয়ে বাস করতে এবং বিবাহিতা নারী দীর্ঘদিন পিত্রালয়ে বাস করলে নিন্দনীয় বলে গণ্য হত। কৈশোরের বিবাহ বাধ্যতামূলক ছিল। নারীর কোন শিক্ষার অধিকার ছিল না। সম্পত্তিতে কোন অধিকার ছিল না এমনকি নারীর নিজের দেহের ওপরও কোন অধিকার ছিল না। এমন উদাহরণও পাওয়া যায় সামান্য অর্থর জন্য পিতা কখন স্বামী কন্যা বা স্ত্রীকে গণিকাবৃত্তিতে নিয়োগ করত। পরিশেষে বলা যায় মহাকাব্যে যুগে নারীর কাছে সমাজের প্রত্যাশা ছিল ‘সে সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী ও গৃহকর্মনিপুণা হবে’। স্বামীর জন্য পরিশ্রম করবে, ন্তানের জন্ম দেবে বিশেষ করে পুত্র সন্তানের। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা তার মন, চন্তা, ব্যক্তিত্ব, থাকবে না- থাকবে পুরুষের সন্দেহ ও লাঞ্ছনা।

Leave a reply