প্রাচীন ভারতে সামন্ত প্রথার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দুটি ছিল-
১) সামন্তরা তাঁকে উর্ধ্বতন প্রভুর সঙ্গে যুদ্ধে যেতে, যুদ্ধের সময় প্রভুকে সৈন্য নিয়ে সাহায্য করতে এবং শান্তির সময় প্রজাদের রক্ষা করতে, প্রভুকে শাসনকার্যে সাহায্য করতে ও প্রভুর বিচার সভায় হাজির হয়ে তাঁকে বিচার কার্যে সাহায্য করতে বাধ্য থাকতেন।
২) প্রাচীন ভারতের সামন্ততন্ত্রের যুগে একে, অন্যের সামন্ত হলেন তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হত না, কারণ ঊর্ধ্বতন প্রভু ও অধস্তন সামন্ত সবাই ছিলেন জমি-ভোগী এক বিশেষ শ্রেণি যাঁদের নিজের হাতে চাষ-আবাদ করতে হত না তাঁদের নিয়োজিত ভূমিহীন কৃষকরাই একাজ করত।
যারা রাজার কাছ থেকে সরাসরি জমির রায়তিস্বত্ব পেল, তাদের বলা হত রাজন্য বা সামন্ত। সামন্তরা আবার প্রায় একই শর্তে তাদের জমির কিছু অংশ উপসামন্তদের মধ্যে বিলি করে দিত। এভাবেই সামন্ততন্ত্রের প্রচলন হলে মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিত্তি হয় জমি’।
ঐতিহাসিক ড. আর. এস শর্মা, ড.ডি.ডি. কোশান্বী, ড.ডি.সি. সরকার, ইরফান হাবিব, ড.বি.এন.এস. যাদব প্রমুখ মনে করেন, গুপ্তযুগের অনেক আগে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। তবে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর (৬৪৭খ্রিঃ) কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দুর্বলতার সুযোগে সামন্ত কর্মচারীরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। শক্তিশালী শাসকদের সময় এই সামন্ত কর্মচারীরা বেতন হিসাবে নির্দিষ্ট ভূখন্ড বা সমৃদ্ধ গ্রাম অধিকার করতেন। রাজার অধীনস্থ সেনাপ্রধান, অনুচর, স্থানীয় শাসনকর্তা একইভাবে জমি ভোগ-দখল করতেন। একসময় ভূমিকর উপর এই অধিকার বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে। তখনই রাজার পরিবর্তে ভূস্বামী বা সামন্ত প্রভুরা এলাকার সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত অবশ্য শাসন পরিচালনার জন্য বহু সামন্ত প্রধান নিয়োগ করেছিলেন। হুন নেতা তোরমান ও মিহিরকুল অথবা পুষ্যমিত্রের আক্রমণকালে সামন্তদের প্রতিপত্তি বহুলাংশে বৃদ্ধিপায়। এইভাবে খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুদের স্বেচ্ছাচার ও একচ্ছত্র আধিপক্য গড়ে ওঠে। অন্যদিকে দাস ও শ্রমিক-কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হতে থাকে। অধ্যাপিকা রোমিলা থাপার বলেন, ‘কৃষকদের জীবন কোনো আশার আলো ছিল না। তাই বাঁচার জন্য এদের অনেকেই দস্যুবৃত্তি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .