প্রাচীন ভারতের রোম বাণিজ্যের অগ্রগতিও প্রসার ও প্রভাব
প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে শক কুষাণ পহ্লব রাজত্বকালে পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বহির্বাণিজ্য চলত সে সময় তাদের বেশির ভাগই হল রোমক সাম্রাজ্যের সাথে। সেইজন্য এই বাণিজ্য রোম ভারত বাণিজ্য বলে পরিচিত। খ্রীষ্টীয় প্রথম শতক থেকে এই বাণিজ্যের সূচনা হয়েছিল।
রোম ভারত বাণিজ্যে লাভের পাল্লা ভারতের দিকেই ঝুঁকে পড়েছিল। রোমে ভারতীয় পণ্য বিশেষ করে বিলাস সামগ্রীর এতই চাহিদা ছিল যে সেখানকার লোকেরা উৎপাদন মূল্যের একশো গুণ বেশি দামেও ভারতীয় দ্রব্য কিনতেন। এর ফলে প্রচুর সোনা ও রূপার রোমক মুদ্রা ভারতে আসত। ২২ খ্রীষ্টাব্দে রোম সম্রাট টাইবেরিয়াস সভায় অভিযোগ করেন বৈদেশিক পণ্যের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রের ধনভান্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক প্লিনির বিবরণী থেকে জানা যায় রোমকে প্রতি বছর কম করেও ৫৫০,০০০,০০০ সেন্টার সেস (রোমান মুদ্রার নাম) পরিমাণ অর্থ ভারতীয় পণ্যের জন্য ব্যয় করা হত।
বারবারিকাম, ব্যারিগাজা বন্দর ছাড়াও তক্ষশিলা, উজ্জয়িনী ও মথুরা থেকে ভারতীয় উৎপাদিত পণ্য সামগ্রিক রোমের বাজারে রপ্তানী করা হত। প্রতিটি বাণিজ্যিক কেন্দ্ৰ সড়কপথে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফলে এই সব শহরে বিদেশী বণিকদের নিত্য আনাগোনা ছিল। বাণিজ্যের সূত্র ধরে ভারতীয় বণিকগণ রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত বহুস্থানের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করেছিল। স্ট্রাবোর লেখার উল্লেখ পাওয়া যায় ২৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতের কোন বড় রাজা রোম সম্রাট অগাস্টস এর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য বহু বিচিত্র উপহার প্রেরণ করেছিলেন। ১৯ খ্রীষ্টাব্দে রোম সম্রাট ট্রাজান এর নিকট কুষাণ রাজসভা হতে রাজদূত প্রেরিত হয়েছিল। এই সমস্ত হতে প্রমাণিত হয় যে রোম ও ভারতের মধ্যে জলপথ ও স্থলপথে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। পশ্চিম উপকূলে ব্রোচ, কল্যাণ ও দক্ষিণ ভারতীয় বন্দরসমূহ হতে পারস্য উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরীয় মধ্য দিয়ে রোমে বাণিজ্য দ্রব্য বৃহদাকৃতি জাহাজে করে প্রেরণ করা
স্থলপথে ও সমুদ্রপথে ভারতের সঙ্গে রোম সাম্রাজ্যের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির পিছনে কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা কাজ করেছিল। (১) রোম সাম্রাজ্যের বিশালতা। (২) বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ফলে যাতায়াত সহজ হয়েছিল এবং বাণিজ্যপথের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভারতের সঙ্গে রোম সাম্রাজ্যের স্থলপথে বাণিজ্যের পরিমাণও নেহাৎ কম ছিল না। বর্তমান জর্ডনের অন্তর্গত ‘পেত্রা’ এবং পরে ‘পামিরা’ ভারতীয় রোম বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। রোমের সঙ্গে বাণিজ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ভারত দুই-ই অংশগ্রহণ করেছিল। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্যদ্রব্য প্রথমে তক্ষশিলায় আসত। তারপর স্থলপথে ‘রেসমীপথ’ ধরে চীনের মধ্য দিয়ে সরাসরি রোমে পৌঁছাতো। অন্য দিকে ভৃগুচ্ছ হয়ে সমুদ্রপথে ভারতীয় দ্রব্য রোমে যেত। এই বাণিজ্য ছিল সব চেয়ে লাভজনক ও রোমের পক্ষে সুবিধাজনক। পেরিপ্লাস গ্রন্থে আমদানী রপ্তানী দ্রব্যের তালিকা পাওয়া যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .