মৌর্যযুগেও বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নত ছিল। আলেকজান্ডারের আক্রমণের পর থেকে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার গ্রীকরাজ্যগুলির সঙ্গে মৌর্যরাজাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। এর ফলে বিদেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-সম্পর্ক দ্রুত বেড়ে যায়। স্থলপথ ও জলপথ দিয়েই এই বাণিজ্য চলত। জলপথে ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি থেকে ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ আরব সাগর ও পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে পশ্চিম এশিয়া থেকে মিশরে আসত। অন্যদিকে স্থলপথেও পারস্য ও এশিয়া মাইনরের ভিতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হত। খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতকে ভারত ও রোম সাম্রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। এছাড়া এই সময় চীন, গ্রীস, সিংহল (বর্তমানে শ্রীলংকা) প্রভৃতি দেশগুলির সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। পশ্চিম এশিয়া থেকে মৌর্য রাজারা মিষ্টি, মদ ও শুকনো ডুমুর আমদানি করতেন। এর বিনিময়ে পশ্চিম এশিয়ার বণিকরা ভারত থেকে বিলাস সামগ্রী ও মসলিন বস্ত্র রপ্তানি করত।
মৌর্যোত্তর যুগের বৈদেশিক বাণিজ্য
মৌর্যোত্তর যুগে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও, একটি বিশেষ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় এবং তা হল ব্যবসা-বাণিজ্য। দীর্ঘ ও প্রশস্ত রাজপথ নির্মাণ করে এবং সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরনের শাসনব্যবস্থার প্রচলন করে মৌর্য সাম্রাজ্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত করেছিল । উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অভারতীয়দের প্রতিপত্তি ভারতীয় বণিকদের সুবিধা করে দিয়েছিল। পল্লব ও কুষাণরা মধ্য-এশিয়ার ভিতর দিয়ে স্থলপথে চীনের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়। মশলা ও বিলাস সামগ্রীর জন্য রোমের চাহিদা ভারতীয় বণিকদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেতে প্রলুব্ধ করত। রোম থেকে সোনা, রূপা ও চীনামাটির বাসন ভারতে আমদানি করা হত। অন্যদিকে ভারত থেকে মসলিন ও সূতীবস্ত্র রোমে রপ্তানি করা হত। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে রোম ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হয়।
এই সময়ে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল প্রধানত বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক। কিন্তু মধ্য-এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব শিয়ার দেশগুলিতে ভারতীয়রা বাণিজ্যের সূত্র ধরে রাজনৈতিক প্রাধান্য স্থাপনা করেছিল। ভারতীয় বণিকরা পণ্যসম্ভার নিয়ে স্থলপথে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ব্যাকট্রিয়ায় আসত। সে-সময় ব্যাকট্রিয়া ছিল ভারত, চীন ও পশ্চিমী দেশগুলির মিলন কেন্দ্র। সেখান থেকে অক্ষুনদীর অববাহিকা ধরে জলপথে কাস্পিয়ান সাগরের বন্দরগুলিতে ভারতীয় পণ্যসম্ভার নিয়ে যাওয়া হল। পূর্বদিকে স্থলপথে পামীর উপত্যকা ও গোবি মরুভূমির ওপর দিয়ে পণ্যসম্ভার নীচে নিয়ে যাওয়া হত।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .