বৈষ্ণব ধর্ম কি
অথবা, প্রাচীন ভারতের বৈষ্ণব ধর্মের উদ্ভব নিরূপণ কর।
গুপ্তযুগ থেকেই হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান সূচিত হয়েছিল। এই সময় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অন্যতম দেবতা বিষ্ণু বা কৃষ্ণ এবং ভাবাদর্শের উত্থান শুরু হয়। তার থেকেই জন্ম নেয় বৈষ্ণবধর্ম সম্প্রদায়। এই ধর্মের প্রাণপুরুষ ছিলেন কৃষ্ণ। কৃষ্ণ ও তার সম্পর্কিত অতিকথার সংমিশ্রণে বৈষ্ণব ধর্মের সৃষ্টি, কিন্তু কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা অনেকাংশেই অপ্রমাণিত।
মহাপুরুষ বা বীর পূজা বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ধর্মের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হল হিন্দুধর্মের এই শাখা খুব সহজেই আঞ্চলিক ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে আত্মস্থ করতে পেরেছিল। এছাড়াও এই ধর্মমত অবতারবাদের সৃষ্টি করে। অবতার বলতে মানুষের হিতের জন্য দেবতাদের মধ্যে আবিভাবকে বোঝায়। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্টের দমন এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য তিনি যুগে যুগে মর্তে অবতীর্ণ হন। এই মত ভারতীয় ঐতিহ্যের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে সরল প্রাণ মানুষরা মনে করে থাকেন। তার ফলেই এই ধর্মমতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। গুপ্তযুগে বৈষ্ণব ধর্মের বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ উভয়দিকই বিশেষ ভাবে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই সময় বিষ্ণুর অবতারগণের পূজা বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহাভারত, মৎস্য, বায়ু ও ভাগবত পুরাণে অবতারদের মহিমা দেখতে পাওয়া যায়। এই যুগেই শ্রী বা লক্ষীকে বিষ্ণুর পত্নীরূপে কল্পনা করা— বৈষ্ণবধর্মের আর একটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়। বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তারের সাথে সাথে বিষ্ণু মূর্তির সংখ্যা ও বৈচিত্র্য দুই-ই বেড়েছিল। বিষ্ণুমূতি, ব্যূহমূর্তি এবং বিভাব এই তিন শ্রেণীতে মূর্তিগুলি নির্মাণ হতে থাকে। কালক্রমে বিষ্ণুর মৎস্য ও কূর্মর আকার ও ধারণ করে। দক্ষিণ ভারতের বৈষ্ণবরা কালক্রমে “আলভার” নামে পরিচিত হলেন। আলভারদের রচিত গাথাগুলি ভক্তিরসে পরিপূর্ণ ছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .