শৈব ধর্ম কি
শৈব ধর্মের মূল ভিত্তি ছিল “ভক্তি”। প্রাচীন ভারতে শিব, বিষ্ণুর মতই জনপ্রিয় ছিলেন। বৈদিক রুদ্র ও অনার্যদের উর্বরতা দেবতার সংমিশ্রণের ফলেই শিবের উদ্ভব হয়েছিল। “শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে” শিবকে মহাদেব বলা হয়েছে। কল্পনা অনুসারে শিব যুদ্ধক্ষেত্র ও শ্মশানে এবং মুন্ড মালা ধারণ, ভৌতিক জগৎ সৃষ্টি করে তিনি অধিষ্ঠান করেন। শিব সর্বধ্বংসী মহাকাল এবং পরমযোগী শিবের তৃতীয় নয়ন আছে। এই নয়ন গভীর জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টির প্রতীকরূপে পরিচিত। শিবকেন্দ্রিক ধর্ম বিশ্বাসের উদ্ভব খৃষ্টীয় শতাব্দীর অনেক আগেই হয়েছিল। পানিণির অষ্টাধ্যায়ীতে শিবভক্তদের উল্লেখ আছে। শৈব সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পতঞ্জলি ব্যবহৃত “শিব ভাগবতগণ” শব্দের মধ্যে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈবদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। ইন্দো-গ্রীক শাসকদের মুদ্রাতেও শৈব ধর্মের কথা জানা যায়।
গুপ্ত পূর্ব যুগে দক্ষিণ ভারতে শৈব ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। “সঙ্গম যুগে” শিবকে শ্রেষ্ঠ দেবতা বলা হয়েছে। শিবলিঙ্গের পূজা শৈবধর্মের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান বলা যায়। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে সর্বপ্রথম শিবলিঙ্গের কথার উল্লেখ পাই। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে হরপ্পার যুগেই লিঙ্গ পুজার উল্লেখ পাই। কুষাণ যুগে কয়েকটি শৈব ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। লাল চুনা পাথরে তৈরী মথুরা শৈলীতে তৈরী একটি ভাস্কর্যে শিব পার্বতী নন্দির পাশে দন্ডায়মান, হাতে পদ্মের কুঁড়ি এক অপূর্ব মহিমা সৃষ্টি করেছে। গুপ্তযুগের শিবলিঙ্গগুলি বাস্তবতা ও প্রথাগতভাবে তৈরী হয়েছিল। প্রথম কুমার গুপ্তের সময়ের কমদাঁড় লিঙ্গ তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এই সময় লিঙ্গোদভব ও মুখলিঙ্গ এই দুই ধরণে শিব মূর্তি নির্মাণ জনপ্রিয় হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের শিব উপাসকরা কালক্রমে “নায়নার” নামে পরিচিত হলেন। শৈবদের মধ্যে খপ্পর সুন্দর মূর্তি ও মালিক ভামগর – এর নাম স্মরণীয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .