মৌর্যযুগে নারীর স্থান
মৌর্য যুগে ভারতীয় সমাজে নারীর স্থান সম্পর্কে জানতে হলে গ্রীক উপাদান, অর্থশাস্ত্র, অশোকের লেখা, পাণিনি ও পতঞ্জলির ব্যাকরণ, রামায়ণ ও মহাভারত বৌদ্ধ সাহিত্য জাতক, এবং স্মৃতিশাস্ত্রের উপর নির্ভর করতে হয়। মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় নারী রক্ষি বাহিনীর কথা উল্লেখ আছে। এই বাহিনী শিকারেও বের হত। নারীরা রাজ্যশাসনেও বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করত। গ্রীক বর্ণনায় ‘পান্ড্য জাতি ও রাজ্য’ নারীদের শাসনাধীন ছিল।
অর্থশাস্ত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নারী নিয়োগের কথা উল্লেখ আছে। এই সময়ের অধিকাংশ শাস্ত্রকারগণ মেয়েদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও স্ত্রী ধনের কথা বলেছেন। আবার স্ত্রীদের অশালীন আচরণের জন্য কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ আছে। এক কথায় স্ত্রীর গতিবিধির উপর স্বামীর প্রায় নিরঙ্কুশ অধিকার ছিল। অর্থশাস্ত্রে আরও দেখা যায় মৌর্যযুগে উচ্চশ্রেণীর মেয়েদের স্বাধীনতা আংশিকভাবে দেশাচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। অশোকের লেখ থেকে জানা যায় যে তার সময় মেয়েরা তুচ্ছ আচার অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকত। একটি লেখতে অশোকের দ্বিতীয়া পত্নী কারু বাকির ধর্মীয় দানের উল্লেখ আছে। তা থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রী তখন স্বামীর সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিত। কন্যা মতান্তরে ভগ্নিকে অশোক ধর্মপ্রচারের জন্য সিংহলে পাঠিয়েছিলেন। নারীদের ধর্মশিক্ষা দেবার জন্য নারী বাহিনী তৈরী করেছিলেন। অশোক এই যুগে অসহায় মেয়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় বয়নশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। বয়স্কা মেয়েরা পুরুষসঙ্গী ছাড়াই মন্দিরে যেত ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করত। এই যুগের “ভাস্কর্য ভারহুত ও সাঁচিতে” দেখা যায় ধনী মহিলারা কটিদেশ পর্যন্ত উন্মুক্ত অবস্থায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা দেখছে। স্বল্প বাস মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে বোধিবৃক্ষ পুজা করছে। সুতরাং মৌর্য যুগে নারী স্বাধীনতা তখন সঙ্কুচিত হলেও একেবারে ছিল না একথা বলা যায় না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .