হরপ্পা সভ্যতা কোথায় কোথায় গড়ে উঠেছিল
জন মার্শালের মতে সিন্ধু তথা হরপ্পা সভ্যতার আনুমানিক সময়কাল হল ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ খ্রীঃ পূর্বাব্দের মধ্যকালে। তবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। গ্রহণযোগ্য মতবাদের মধ্যে মার্টিন হুইলার সি.জে. গ্যাড এবং ব্যাসামের মতে ২৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রীঃ পূর্বের মধ্যে এই সভ্যতার চূড়ান্ত সময়কাল। এই সভ্যতা ক্রমাগত সিন্ধু নদীর পূর্ব দিকে সম্প্রসারিত হয়েছিল। তারই কিছু তথ্য পরিবেশন করা হল।
(ক) হরপ্পা
এই সভ্যতার প্রথম আবিস্কৃত স্থানটি হল হরপ্পা। হরপ্পা পঞ্জাবের মন্টোগোমারী জেলার রাভি নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯২১ সালে দয়ারাম সাহানী এই নগরটির আবিষ্কার করেন। এই নগরটি আঞ্চলিক নাম “পশুপতির খাদ্য”। খননের ফলে শস্যাগার, সমাধি, তামার দ্রব্যসামগ্রী, পাথর ও পোড়া মাটির নর্তকী মূর্তি লিঙ্গ যোনি এবং অসংখ্য শীলমোহর পাওয়া গেছে। হরপ্পা ছিল প্রধানত নৌকা তৈরির কেন্দ্র।
(খ) মহেঞ্জোদড়ো
এই সভ্যতার বৃহত্তম কেন্দ্র। মহেঞ্জোদড়ো কথার অর্থ হল “মৃতের স্তূপ”। ১৯২২ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই সভ্যতা আবিস্কার করেন। এখানে একটি বৃহত্তর স্নানাগার পাওয়া গেছে। একটি বৃহৎ শস্যাগারও পাওয়া গেছে। টেরাকোটা পুতুল চালযুক্ত গাড়ি, সোনার অলঙ্কার, ব্রোঞ্জের নর্তকীমূর্তি অন্যতম নিদর্শন।
(গ) লোথাল
বিশ্বের প্রচীনতম পোতাশ্রয়। গুজরাটের আমেদাবাদ অঞ্চলের সারাঙ্গা জেলায় অবস্থিত। ১৯৫৭ আর. এস. রাও লোথাল আবিষ্কার করেন। এই স্থানটি প্রসিদ্ধ।
(ঘ) কালিবঙ্গান
বর্তমানের রাজস্থানের গঙ্গানগরের এই প্রত্নক্ষেত্রটি অবস্থিত। ১৯৫৩ সালে এ. ঘোষ এই ক্ষেত্রটি আবিস্কার করেন। তামার বালা, কাঠের খেলাগাড়ি, কাঠের লাঙল, লিঙ্গ যোনি, আইভরি নির্মিত চিরুনি, আয়তাকার কবর, জোড়া কবর পাওয়া গেছে।
(ঙ) চান হু দারো
বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশে এই প্রত্নক্ষেত্রটি আবিস্কৃত হয়। ১৯৩৫ সালে এম. জি. মজুমদার এই ক্ষেত্রটি আবিস্কার করেন। এখানকার জলনিকাশী ব্যবস্থা ছিল খুব উন্নত। তামা, টিন, সোনা, রূপার ব্যাপক ব্যবহার ছিল।
(চ) বনওয়ালী
হরিয়ানারহ হিসার জেলায় অবস্থিত। ১৯৭৩ সালে আর.এস. বিস্ত এটির আবিস্কার করেন। এখানে উন্নত মানের বার্লি পাওয়া গেছে। এই স্থানটি ছিল হরপ্পা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সভ্যতার মিশ্রণ ক্ষেত্র।
(ছ) কোটদিজি
হরপ্পা সভ্যতার অতি প্রাচীনতম স্থান সিন্ধের ক্ষিরপুরে অবস্থিত এবং ১৯৩৫ সালে অবিস্কৃত হয়।
(জ) রোপার
এই ক্ষেত্রটি অবস্থিত পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে। ১৯৫৩ ওয়াই. ডি. শর্মা এই ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেন। হরপ্পার মত নিদর্শনই আবিস্কৃত হয়েছে। বিশেষ আশ্চর্যের বিষয় হল একটি কুকুরের সমাধি এবং তামার হাত কুঠার।
(ঝ) আলমগীরপুর
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মীরাট জেলায় হিন্দন নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন আকৃতির পাত্র পাওয়া গেছে।
(ঞ) ধোলাভীরা
১৯৬৭ সালে জে.পি জোশী আবিস্কার করেন। এখানে সুন্দর জল সরবরাহ ও নিকাশী ব্যবস্থা। সাইনবোর্ড এবং এখানের গৃহগুলি নানা রং এর দ্বারা চিত্রিত ছিল।
(ট) দেশালপুর
গুজরাটের ভূজ অঞ্চলে ভাদর নদী তীরে অবস্থিত। এখানে একটি বড় দুর্গ পাওয়া গেছে।
(ঠ) রংপুর
গুজরাটের নোথাল থেকে ৮০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। এই ক্ষেত্রটি খননকার্য করে ধানের তুষ এবং ছয় প্রকার বাসনপত্র পাওয়া গেছে।
এই অঞ্চলগুলি ছাড়াও করাচীর নিকট আলহাদিনো ও বালাকোট, সিন্ধুর আলমুরাটা, ভারতের রাখিগ্রহী, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় অজয় নদীর তীরে “পান্ডু রাজার ঢিবি” এই সব প্রত্নক্ষেত্রেও হরপ্পা যুগের বহু নিদর্শন আবিস্কৃত হয়েছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .