Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

চোল রাজাদের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা কিরূপ ছিল?

চোল রাজাদের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা

চোলদের রাষ্ট্র বিন্যাসের ভিত্তি ছিল গ্রাম। আর এর প্রকৃতি ছিল অন্য যুগের শাসনব্যবস্থা থেকে সম্পন্ন ভিন্ন।

গ্রামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা

চোলরাজগণ কেবলমাত্র সামরিক প্রতিভার পরিচয়ই দেন নাই, শাসন ব্যাপারেও তাঁহারা অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করিয়াছেন। দক্ষিণ-ভারতের অন্যান্য রাজবংশগুলির তুলনায় চোল-রাজাগণ এক সুদক্ষ ও জনহিতকর শাসন-প্রণালী প্রবর্তন করিয়াছিলেন। চালুক্য, রাষ্ট্রকূট, হোয়সল প্রভৃতি বংশের নৃপতিগণ শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিলেও সমস্ত শ্রেণীর প্রভাব খর্ব করিয়া শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে পারেন নাই। কিন্তু চোলবংশীয় রাজারা সামন্তদের ক্ষমতা খর্ব করিয়া শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রবর্তন করেন। প্রথম পরাস্তক এবং অন্যান্য চোলরাজগণের লিপি হইতে আমরা চোল-শাসব্যবস্থা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানিতে পারি। এই শাসনব্যবস্থার ভিত্তি ছিল গ্রাম এবং স্বায়ত্তশাসন ছিল উহার মূলনীতি।

একটি গ্রামকে বা কয়েকটি ক্ষুদ্র-গ্রামের সমষ্টিকে ‘কুর্ম্’ বলা হইত। গ্রামগুলিতে স্বায়ত্ত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত গ্রাম্যসভা গ্রামের শাসন পরিচালনা করিত। গ্রাম্যসভার কার্যাদি পরিদর্শনের জন্য অবশ্য রাজকর্মচারী নিযুক্ত থাকিত। গ্রামের যাবতীয় জমির নিয়ন্ত্রণ, কৃষি জমির জরিপ, রাজস্বসংগ্রহ, বিরোধ নিষ্পত্তি এবং শিক্ষা পরিচালনার ভার থাকিত এই সমস্ত গ্রাম্যসভার উপর। বিভিন্ন দায়িত্বভার সুষ্ঠুভাবে বহন করিবার জন্য গ্রাম্যসভা আবার কয়েকটি সমিতিতে বিভক্ত থাকিত। গ্রাম্যসভাগুলির নিজস্ব কোষাগার থাকত। অন্যদিকে গ্রাম সমিতি ছিল দুইটি (ক) উর এবং সভা। তাছাড়া শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্য স্থানীয় সমিতি ছিল। তাকে বলা হত ‘নগরম’। এই সবগুলি ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাথমিক সমিতি। কেন্দ্রীয় রাজকর্মচারীরা মাঝে মাঝে তাদের হিসাব পরীক্ষা করতেন। এছাড়া সমিতিগুলি যখন তাদের সংবিধান পরিবর্তন বা ভূমিস্বত্ত্ব পুনঃনির্ধারণ করতেন, সেই অধিবেশনে রাজকর্মচারীরা উপস্থিত থাকতেন।

নাডু, কোটাস ও মন্ডল শাসনব্যবস্থা : কয়েকটি গ্রাম বা ‘কুমের’ সমষ্টিকে বলা হইত ‘নাডু’ বা ‘জেলা’। কয়েকটি নাড়ু লইয়া একটি ‘কোট্টাম’ বা ‘বিভাগ’ গঠিত হইত। কয়েকটি কোট্রাম লইয়া একটি প্রদেশ বা ‘মন্ডল’ গঠিত হইত। এইরূপে ছয়টি মন্ডল লইয়া সমগ্র চোলরাজ্য বা ‘চোলমন্ডলম্’ সৃষ্টি হইয়াছিল। মন্ডলগুলির মধ্যে কয়েকটি রাজবংশীয় পুরুষগণ কর্তৃক এবং কয়েকটি সামন্তগণ কর্তৃক শাসিত হইত। চোল শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধি সভার প্রচলন। চোল মন্ডলম এর প্রতিনিধি সভার উল্লেখ আছে। অনুরূপ নাড়ু বা জেলাতেও প্রতিনিধি সভা ছিল।

উৎপন্ন শস্যের এক-ষষ্ঠাংশ রাজস্ব হিসাবে আদায় করা হইত। অন্যান্য করও কিছু আদায় হইত; কিন্তু কোন সময়েই লোকের মোট আয়ের অন্ধ্যাংশ অংশের বেশি সরকারকে দিতে হইত না। উৎপন্ন ফসল বা অর্থ দ্বারা রাজস্ব দেওয়া চলিত। দেশের সামরিকবাহিনী ও নৌ-বাহিনী সুগঠিত ছিল। চোলদের নৌ-বাহিনী ছিল সত্যই প্রশংসনীয়। মালাবার ও করোমন্ডোল উপকূল ও সমগ্র বঙ্গোপসাগরে চোল নৌ-শক্তির অপ্রতিহত আধিপত্য ছিল। দেশে কৃষি-দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একাধিক বৃহৎ সেচ-পরিকল্পনা কার্যকরী করা হইয়াছিল। কাবেরী ও অন্যান্য নদীগুলি জলসেচ কার্যের জন্য ব্যবহৃত হইত।

উর ও সমিতি কার্যকলাপ

স্থানীয় সমিতিগুলির মধ্যে উর ছিল সবচেয়ে সহজ ও সরল। গ্রামের করদাতাদের নিয়ে ‘উর’ গঠিত হত। চোলদের লেখতে সভা সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়। সর্বত্র এই সভা ব্রাহ্মণ গ্রাম অর্থাৎ চতুবেদিমঙ্গলমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। রাজারা তাদের দানের দ্বারা মঙ্গলম সৃষ্টি করতেন। সভা অথবা মহাসভার স্থানীয় শাসন যন্ত্র তুলনায় অনেক বেশি জটিল ছিল। সাধারণভাবে এই মহাসভা বিভিন্ন কার্য নির্বাহী সমিতির মাধ্যমে কাজ চালাত। এই কার্যনির্বাহী সমিতিগুলির পূর্ব ইতিহাস জানা যায় না। ঢোল বাজিয়ে মহাসভার অধিবেশন আহবান করা হত। সাধারণত মন্দির প্রাঙ্গণে অধিবেশন বসত। অরণ্য সরক্ষণ পতিত জমি উদ্ধার, উৎপন্ন ফসলের পরিমাপ ও রাজস্ব নির্ধারণে রাজকর্মচারীদের সহযোগিতা করা ছিল এই মহাসভার অন্যতম কাজ। এছাড়াও গ্রাম সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য কর ধার্য করার অধিকার মহাসভার ছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ পুস্করিণী খননের কথা বলা যায়। দান এবং কর সংক্রান্ত লেখ্যগুলি মহাসভা রক্ষা করত।

গ্রাম্য স্বায়ত্তশাসনের উপর ভিত্তি করিয়া চোলরাজগণ যে সুনিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়াছিলেন তাহা অনেক বিদেশী ঐতিহাসিকের বিস্ময় উৎপাদন করিয়াছে। চোল রাজারা নির্মাতা হিসাবেও তাঁহাদের কৃতিত্বের প্রমাণ রাখিয়া গিয়াছেন। কৃষি উন্নয়নের জন্য তাঁহারা বিভিন্ন জলসেচ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। চোল রাজাগণ তাঁহাদের শহর-নগরগুলি প্রাসাদ ও প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া সুসজ্জিত করিয়াছিলেন। শহর-নগরে বহু মঠ ও মন্দির নির্মিত হইয়াছিল। চোল শাসনব্যবস্থা সুদক্ষ ও জনপ্রিয় হইলেও কালক্রমে ইহার উপযোগিতা হ্রাস পাইতে থাকে। সামন্ততন্ত্রের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় গণভিত্তিক স্বায়ত্ত শাসনব্যবস্থার স্বনির্ভরতা বিনষ্ট হইয়াছিল। উপসংহারে বলা যায় যে চোল শাসন ব্যবস্থায় একদিকে ছিল যোগ্য আমলাতন্ত্র এবং অন্যদিকে ছিল সক্রিয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলি। এই দুই এর সাহায্যে চোল শাসন ব্যবস্থা যে নতুন বৈশিষ্ট্যের দাবী রেখে ছিল তা ভারতের অন্য কোন রাজত্বকালে দেখা যায় না।

Leave a reply