দ্বিতীয় পুলকেশী (৬১১-৪২ খৃষ্টাব্দ) সিংহাসনে আরোহণ করে তাঁর পিতৃপুরুষদের মতই শ্রীপৃথিবীবল্লভ ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করেন। নাসিক থেকে প্রাপ্ত লোহনের লিপি (৬৩০ খৃঃ) থেকে জানা যায় যে তিনি পরম ভাগবত, অর্থাৎ বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন। মঙ্গলেশের সঙ্গে পুলকেশীর গৃহযুদ্ধের সময়ে চালুক্যদের অধীনস্থ প্রদেশগুলি হাতছাড়া হয়ে যায়, এবং আপ্পায়িক ও গোবিন্দ নামক দুজন সামন্ত রাজা চালুক্যদের রাজ্যের মূল অংশেই আক্রমণ চালান। পুলকেশী কৌশলে উভয়ের মধ্যে ভেদ এনে দিয়ে নিজের অবস্থাকে গুছিয়ে নেন।
তাঁর সভাকবি রবিকীর্তি তাঁর যে প্রশস্তি রচনা করেছিলেন, যা আইহোলি লিপি নামে খ্যাত, তা থেকে দ্বিতীয় পুলকেশীর দিগ্বিজয়ের কাহিনী জানা যায়। দক্ষিণে তিনি প্রথম পরাজিত করেন বনবাসী অঞ্চলের কদম্বদের, তারপর দক্ষিণ মহীশূরের গঙ্গদের, মহীশূরের সিমোগ জেলার আচু পদের, কোংকনের মৌর্যদের এবং আরও উত্তরে লাট, মালব ও গুর্জরদের।
এরপর আইহোলি লিপিতে হর্ষবর্ধনের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে; এই যুদ্ধ হয়েছিল রেবা বা নর্মদা নদীর তীরে যাতে দ্বিতীয় পুলকেশী জয়লাভ করেছিলেন। এই যুদ্ধের তারিখ নিয়ে সংশয় আছে। এটি সম্ভবত ঘটেছিল ৬৩৪-৩৫ খৃষ্টাব্দে। কেননা ৬৩০ খৃষ্টাব্দে রচিত পুলকেশীর লোনের লিপিতে এই বিজয়ের উল্লেখ নেই।
অতঃপর আইহোলি-লিপিতে দ্বিতীয় পুলকেশীর দক্ষিণাপথের পুর্বাঞ্চল বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এখানে তিনি কোসল (সম্ভবত দক্ষিণ কোসলের পান্ডুবংশীদের) এবং কলিঙ্গদের (সম্ভবত গঞ্জাম জেলার কলিঙ্গনগরের গঙ্গদের) পরাজিত করেন।
তারপর তিনি দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে পিষ্ঠপুর ও কুনাল হ্রদে (এল্লোরের নিকট কোল্পেরু হ্রদ) একটি দুর্গ অধিকার করেন। বিষ্ণুকুণ্ডীবংশীয় রাজা তৃতীয় বিক্রমেন্দ্রবর্মাকেও তিনি পরাজিত করেন। পিষ্ঠপুরের সিংহাসনে তিনি তাঁর ছোটভাই বিষ্ণুবর্ধনকে বসান, যাঁর থেকে পরে বিখ্যাত পূর্বচালুক্য বংশের উদ্ভব হয়। আরও দক্ষিণে তিনি পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্ৰবর্মাকে (৬০০-৬৩০ খৃঃ) পরাজিত করেন এবং পল্লব রাজ্যের অভ্যন্তরে ঢুকে যান। পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চী তিনি অধিকার করেননি বটে, কিন্তু তা তিনি বিপন্ন করে তুলেছিলেন। পল্লবদের লিপিতেও এই ইঙ্গিত আছে। এর পর পুলকেশী কাবেরী নদী অতিক্রম করে চোল, কেরল ও পান্ড্যদের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন করেন। পল্লবদের বিরুদ্ধে এই শক্তিগুলিকে তিনি তাঁর অনুকুলে সক্রিয় রাখতে চেয়েছিলেন।
পল্লবদের উপর কিন্তু পুলকেশীর বিজয়লাভ স্বল্পস্থায়ী হয়েছিল, এবং শেষ পর্যন্ত পল্লবদের হাতেই পুলকেশীকে পরাজিত ও নিহত হতে হয়। পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মার পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মা ৬৪২ খৃষ্টাব্দে পুলকেশীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। পরিয়ল, মনিঙ্গল, শুরমার ও অপরাপর স্থানে কয়েকটি যুদ্ধে নরসিংহবর্মা পুলকেশীকে পরাস্ত করেন এবং তাঁর রাজধানী বাদামি শহরটিকেও ধ্বংস করেন। তিনি যে সত্যই বাদামি ধ্বংস করেছিলেন তা তাঁর ‘বাতাপিকোও’ উপাধি থেকেই বুঝতে পারা যায়।
দ্বিতীয় পুলকেশীর মৃত্যুর পর তার পুত্র ১ম বিক্রমাদিত্য (৬৫৫-৮১ খৃঃ) রাজা হন। বাগুমুরা লিপি থেকে জানা যায় এই সময়টি ছিল চালুক্যদের পক্ষে খুবই দুর্যোগপূর্ণ জানা যায় যে তিনি পল্লবরাজ ১ম নরসিংহ বর্মা, দ্বিতীয় মহেন্দ্রবর্মা ও ১ম পরমেশ্বর বর্মার সঙ্গে যুদ্ধ করে কাঞ্চী অধিকার করেন। অন্য মতে পল্লবদের কাছে তিনি পরাজিত হন। যাই হোক দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘকাল যুদ্ধ চলেছিল এই কথা ঠিক। এই সময় তাঁর ভাই জয়সিংহ বর্মা গুজরাতের লাট অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর পুত্র বিনয়াদিত্য রাজা হন। বিভিন্ন লেখমালা থেকে জানা যায় তিনি পল্লব কেরল বালচুরি মালব চোল পান্ড্য প্রভৃতি আঞ্চলিক শক্তিকে পরাজিত করেন। কথিত আছে তিনি উত্তরাপথেও অভিযান করেছিলেন। এরপর ৬৯৬ থেকে ৭৩৩ খৃঃ পর্যন্ত তাঁর পুত্র বিজয়াদিত্য রাজত্ব করেন। তাঁর ‘উলচল শিলালিপি’ থেকে জানা যায় তিনি কাঞ্চী জয় করেন এবং দ্বিতীয় পরমেশ্বর বর্মা থেকে কর আদায় করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .