অহিফেন বা আফিম যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের কারণ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ভূতপূর্ব জাতীয়তাবাদী চিনা রাষ্ট্রদূত সিয়াং টিং ফু (Tsiang Ting-fu) এর মতে যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের মৌলিক কারণগুলি ছিল চিনাজাতির অনুন্নতা, চিনা সৈন্যবাহিনীর সেকেলের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার, মধ্যযুগীয় চিনা সরকার এবং সমগ্র চিনা জাতির মধ্যযুগীয় মানসিকতা। চিনের পরাজয়ে কোনো রহস্য ছিল না। ইহা ছিল অনিবার্য।
চিনা সৈন্যবাহিনী আধুনিক যুদ্ধোপকরণে সজ্জিত ছি৭ল না এবং প্রযুক্তি বিদ্যায় ছিল অনগ্রসর। রণকৌশলে চীনা সামরিক বাহিনী ছিল সেকেলে এবং সামরিক শাসন ছিল দূর্নীতি-দুষ্ট। ছয় লক্ষ চিনা সৈন্যে গঠিত চিনা বাহিনীতে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব ছিল। সামরিক পদস্থ কর্মচারীরা দূর্নীতিপরায়ণ ছিলেন। পাচক ও ভৃত্যকেও তাঁরা সৈন্যবাহিনীভুক্ত করতেন, তাদের রসদ আত্মসাৎ করবার উদ্দেশ্যে । কাগজে কলমে যত সৈন্যসংখ্যা দেখানো হত, প্রকৃতপক্ষে সৈন্যসংখ্যা তত থাকত না। স্থলবাহিনী বা নৌবাহিনী আদৌ যুদ্ধ পটু ছিল না। জনৈক চীনা দেশ প্রেমিক সো-সুং-টাং (Tso Tsung-tang) এর মতে, স্থলবাহিনীর সৈন্যগণ অশ্বে আরোহন করতে বা গুলিবর্ষন করতে জানত না, নৌ বাহিনীর সৈন্যেরা জাহাজ চালাতে বা কামান দাগতে জানত না। সামরিক পদস্থ কর্মচারীবৃন্দ কেবলমাত্র আয়-ব্যায়ের হিসাব রাখতে জানতেন। যোদ্ধারা কোনো সামরিক শৃঙ্খলার অধীন ছিল না। তারা আফিং এর নেশা করত এবং জনগণের নিকট ছিল ভীতিপ্রদ। চিনা পোতগুলি ইউরোপীয় জাহাজগুলির মতো আধুনিক সমরোপকরণে সজ্জিত ছিল না। সেখানে বিদেশি জাহাজ দ্রুত গুলিবর্ষণকারী বন্দুক ও কামানে সজ্জিত ছিল, সেখানে চীনা পোতগুলিতে ‘শোভিত’ থাকত তীর ধনুক এবং সেকেলে কামান। কমিশনার লিন দুঃখের সঙ্গে স্বীকারোক্তি করেছেন যে আধুনিক রণসজ্জায়, রণ বিদ্যায় এবং প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগে ইংল্যান্ড চিন অপেক্ষা উচ্চতর আসনের অধিকারী।
উল্লিখিত কারণগুলি চিনের পরাজয় অনিবার্য করে তোলে, আর ব্রিটেনের সাফল্য নির্ণয় করে পাশ্চাত্য দেশের আধুনিক যুদ্ধ পদ্ধতি এবং পশ্চিমী সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .