বৈদিক আর্যদের ধর্মবিশ্বাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য
প্রকৃতি থেকে ঈশ্বরের জন্ম হয় নাই—ঈশ্বর অনাদি। এই ধারণা থেকেই আর্যদের ধর্ম বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল। এই বিশ্বাসগুলি হল-
(১) আর্যরা বহু দেবদেবী উপাসনা করত।
(২) এদের ধর্মবিশ্বাস ছিল সর্ব প্রাণবাদ।
(৩) ঋকবেদের পুরুষ দেবতার তুলনায় নারী দেবতার ভূমিকা গৌণ ছিল।
(৪) এই যুগের ঋষিদের চোখে বিশেষ কোনও দেবতা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে পরিচিত হয় নাই।
(৫) এই যুগে বহু দেবত্বের সাথে সাথে একেশ্বরবাদের সুরও ধ্বনিত হয়েছে।
(৬) মূর্তি পূজার প্রচলন হয় নাই।
(৭) আর্যদের ধর্মে যাগযজ্ঞের একটি বিরাট পুরোহিতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল পুরোহিতদের মধ্যে ‘হোতা’ ছিলেন প্রধান।
(৮) এই যুগের বেশী ভাগ দেবতাই ছিলেন প্রাকৃতিক দেবতা। প্রকৃতির লীলা বৈচিত্র্যরূপে তাঁরা রূপায়িত হতেন। এই রূপ দেবতার সংখ্যা ৩৩-এর বেশি ছিল না।
দেবতাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ইন্দ্র। প্রায় ২৫০টি স্তোত্র তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত। দ্বিতীয় স্তরের দেবতা ছিলেন বরুন। তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বত্র দীপ্যমান বলে পরিচিত ছিলেন। ‘রুদ্র’ ছিলেন অন্তরীক্ষস্থ দেবতা। অমিতশক্তির অধিকারী তিনি। পরবর্তীকালে অন্যান্য দেবতা শিবের সাথে লীন হয়ে গেছেন। ‘বিষ্ণু’ ও বেদের একজন গৌণদেবতা, ৬টি মাত্র স্তোত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বিষ্ণুকে সূর্যের এক বিশেষ সত্তারূপে কল্পনা করা হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির দেবতা ছিলেন ‘মরুত’। অন্তরীক্ষের অন্য তিন দেবতা হলেন ‘বায়ু’, ‘বাত’, ও ‘পর্জন্য’। বেদের অন্যতম দেবতা হলেন অগ্নি। অগ্নি যজ্ঞ ও গৃহের দেবতা।
ঋকবেদের নবম মন্ডল সোমের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তিনি আকাশের আলো দান করেন। বেদের দেবতাদের সাথেই যুক্ত হয়ে থাকে সোমলতা। এই সোমলতা অমৃতরসরূপে মানুষ ও দেবতাদের তৃপ্ত করে থাকেন। সোমরস পান করলে অমরত্ব লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হত। আলোর দেবতা ছিলেন ‘সূর্য’। তাঁর অপর নাম সবিতা। দেবীদের মধ্যে আছেন অদিতি, তিনি দেব জননী। এছাড়াও জলের দেবতা অপ, পুষ্টির দেবতা পৃষণ, নদীর দেবী সরস্বতী, সূর্যোদয়ের দেবী ঊষাও সেই যুগে জনপ্রিয় ছিলেন। এইভাবেই সেই যুগে মানুষের অন্তরের ভাবসমূহ থেকেই দেবতার সৃষ্টি হয়েছে-আর সৃষ্টি হয়েছে শ্রদ্ধার ক্ষেত্র।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .