হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের পর এর প্রাচীনত্ব ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কৌতূহলের পাশাপাশি এর সঙ্গে সমকালীন অন্যান্য সভ্যতার সম্পর্কে বিষয়টিও যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে।
মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মেসোপটেমীয় সভ্যতার ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সম্ভবত স্থলপথে বালুচিস্তানের মধ্য দিয়ে এবং জলপথে পারস্য উপসাগরের মধ্য দিয়ে বাহরিন বন্দরের মাধ্যমে ওই বাণিজ্য চালু ছিল। হরপ্পার বহু সীলমোহরের সন্ধান মেসোপটেমিয়াতে পাওয়া গিয়েছে। আক্কাদের রাজা সায়গনের রাজধানীতে সিন্ধুর সীলমোহর পাওয়া গিয়েছে। সম্রাট সায়গনের সময় উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার নানা প্রমাণ পাওয়া যায়। সার্গন, দিলমুন, মগন ও মেলুহারদের সঙ্গে আক্কাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই মেলুহাদেরকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সিন্ধু উপত্যকার সঙ্গে শনাক্ত করেছেন। সম্ভবত সুমেরে সিন্ধু অঞ্চলের নাম ছিল ‘মেলুহা’। সিন্ধুর শহরগুলি থেকে সুতিবস্ত্র পশ্চিম এশিয়ার শহরগুলিতে রফতানি হত। পশ্চিম এশিয়ার ‘উম্মা’ শহরে সিন্ধুর সীলমোহরযুক্ত কাপড়ের গাট আবিষ্কৃত হয়েছে।
গর্ডন চাইল্ড বলেন যে সিন্ধুর বণিকরা সমুদ্র পার হয়ে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিসের তীরবর্তী শহরগুলিতে বাণিজ্য করতে আসত। পারস্য ও ক্রিটের সাথেও হরপ্পাবাসীর যোগাযোগ ছিল। বাবিলনবাসীগণ কার্পাস বস্তুকে “সিন্ধম” বলত। এর থেকে অনুমান করা হয় সিন্ধু অঞ্চল থেকে কার্পাস বস্ত্র আমদানি করা হত।
মিশরীয় সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক
মিশরীয় সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। কারণ মিশরীয় সভ্যতায় কুঁজ বৈশিষ্ট্যযুক্ত ষাঁড়ের পায়ে আকৃতি যুক্ত টুল, দীপাধার, শিশুসহ মাতৃমূর্তি ইত্যাদি জিনিস সিন্ধু শহরে পাওয়া গিয়েছে। ব্যাবিলনের মানুষেরা কার্পাস বস্ত্রকে ‘সিন্ধম’ নামে অভিহিত করত। কারণ এই ধরনের বস্ত্রগুলি সিন্ধু দেশ থেকেই আমদানি করা হত। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, পশ্চিম এশিয়ার সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি, সারিয়ানিবি ব্যাকট্রিয়াতে হরপ্পার তৈজসপত্র আবিস্কারের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের উত্তর পূর্বাংশে যোগাযোগ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .