হুগলি শিল্পাঞ্চলে পাট শিল্প গড়ে ওঠার কারণ
বর্তমানে ভারতে ৭৩ টি পাটকল আছে। এগুলির মধ্যে ৫৯ টি গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর উভয় তীরে — উত্তরে কল্যাণী-বাঁশবেড়িয়া থেকে দক্ষিণে বজবজ-উলুবেড়িয়ার মধ্যে , যার নাম হুগলি শিল্পাঞ্চল। এত স্বল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাট শিল্পের এরকম ঘন সন্নিবেশকে পাট শিল্পের একদেশী ভবন বলে। অনেকগুলি কারণে হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের এই একদেশী ভবন ঘটেছে—
কাঁচা পাট পাওয়ার সুবিধা
নিকটবর্তী অঞ্চলে সারা দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাঁচা পাট উৎপন্ন হয়। নদীপথে এইসব কাঁচা পাট সহজে পাটকলগুলিতে আনা যায়।
ঐতিহাসিক কারণ
পাশ্চাত্য কারিগরি সভ্যতার প্রথম অনুপ্রবেশ ঘটে এখানে। প্রধানত ইংরেজদের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে পাটকল স্থাপিত হয়।
রানিগঞ্জের কয়লা
পাটকল চালানোর প্রয়োজনীয় কয়লা রানিগঞ্জ ( মাত্র ১৯০ কিমি দূরে ) থেকে খুব সহজে রেল ও সড়কপথে আনা যায়।
কলকাতা বন্দর
কলকাতা বন্দরের নৈকট্য পাট শিল্পের উন্নতির সহায়ক , কারণ এর মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি এবং বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনার সুবিধা হয়।
হুগলি নদী
হুগলি নদীর জল পাটকলগুলির প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা মেটায়। পাটকলগুলি এই নদীর উভয় তীরে স্থাপিত হওয়ায় জলপথে কলকাতা বন্দরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা
অঞ্চলটি রেলপথ , জলপথ এবং সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। পাটজাত দ্রব্য প্রেরণ , কাঁচামাল আনয়ন প্রভৃতির জন্য এই যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকারী।
সুলভ শ্রমিক
পশ্চিমবঙ্গ , ঝাড়খণ্ড , বিহার এবং ওড়িশার সুলভ শ্রমিক এই শিল্পের উন্নতির সহায়ক।
মূলধন
প্রথমদিকে ইংরেজরা এই শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করে। পরবর্তীকালে কলকাতা বাণিজ্য এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় এই শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। উল্লিখিত সুবিধার জন্য এখানকার অনেকগুলি জায়গায় পাটকল গড়ে উঠেছে।
উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি হল — বিড়লাপুর , উলুবেড়িয়া , বজবজ , হাওড়া , বালি , রিষড়া , আগরপাড়া , নৈহাটি , বৈদ্যবাটী , ভদ্রেশ্বর , শ্রীরামপুর , হালিশহর , বাঁশবেড়িয়া , জগদ্দল , শ্যামনগর , কামারহাটি প্রভৃতি।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .