কলকাতা কংগ্রেসে চরম পন্থীদের তৎপরতায় ভীত হয়ে নরমপন্থী নেতা ফিরোজ শাহ মেহতা ১৯০৭ খ্রিঃ-র কংগ্রেস অধিবেশনের স্থল নাগপুর থেকে সুরাটে সরিয়ে নেন। এদিকে ফিরােজ শা মেহতা, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নরমপন্থী নেতারা। কলকাতা কংগ্রেসে গৃহীত চারটি প্রস্তাবকে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সুরাট কংগ্রেসে প্রায় ১৬০০ প্রতিনিধি যােগ দেন। এদের মধ্যে ৬০০ জন ছিলেন চরমপন্থী। তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে অধিবেশনে আসেন, কারণ তাঁরা আশঙ্কা করেন যে, কলকাতা কংগ্রেসে গৃহীত চারটি প্রস্তাব সুরাটে নাকচ করা হবে। চরমপন্থী গােষ্ঠী লালা লাজপত রায়কে সভাপতি করার প্রস্তাব রাখে। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোখলের অনুরােধে লালা লাজপত রায় সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালে রাসবিহারী ঘােষের সভাপতিত্বে সুরাট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তখন বালগঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে চরমপন্থীরা তাতে বাধা দিলে মঞে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পুলিশী হস্তক্ষেপেতা শান্ত করতে হয়। কিন্তু চরমপন্থী দল কংগ্রেস ত্যাগ করে বেরিয়ে যায়।
সুরাট বিচ্ছেদের তাৎপর্য
সুরাট কংগ্রেসের ঘটনা এক গভীর তাৎপর্য বহন করে।
প্রথমতঃ কংগ্রেসী আন্দোলন এতে দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়তঃ সুরাট বিচ্ছেদের ফলে কংগ্রেসের গােষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে এবং জনমানসে কংগ্রেস সংগঠনের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়তঃ ব্রিটিশ সরকার দ্বিগুণ উৎসাহে ‘Divide and Rule Policy’ প্রয়ােগ করতে থাকে। নরমপন্থীদের তুষ্ট করার জন্য একদিকে যেমন মলে-মিন্টো আইন (১৯০৯ খ্রিঃ) পাশ করে, অন্যদিকে তেমনি চরমপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে।
চতুর্থতঃ চরমপন্থীদের উৎসাহে দেশের যুবশক্তি বিপ্লবী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামের একনব দিগন্ত উন্মােচিত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .