সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বােঝায়
যদিও সাম্রাজ্যবাদের নির্দিষ্ট কোনাে সংজ্ঞা নেই তা সত্ত্বেও বলা যায় যে সাম্রাজ্যবাদ বলতে প্রকৃতপক্ষে সামরিক কর্তৃত্ব স্থাপনকে বােঝানাে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদ বলতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র দ্বারা দুর্বল। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিনাসকে বােঝানাে হয়ে থাকে।
সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ
সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণটি এক বিতর্কিত বিষয়। কোনাে একটি নির্দিষ্ট কারণে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয়নি। সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের একাধিক কারণের মধ্যে বলা যায় –
(A) অর্থনৈতিক কারণ
উনিশ শতকে সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের পশ্চাতে অর্থনৈতিক কারণগুলি হলাে –
(i) কাঁচামাল সংগ্রহ : উনবিংশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লব ও শিল্প উন্নতির ফলে ইউরােপের শক্তিশালী দেশগুলিতে বৃহৎ আয়তন কলকারখানা স্থাপন এবং দ্রুত উন্নতি বৃদ্ধির ফলে কাঁচামালের প্রয়ােজন দেখা দেয়, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে এই কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদী লড়াই।।
(ii) বাজার দখল : অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করার জন্য ইউরােপের প্রত্যেক রাষ্ট্রই নিজ নিজ দেশের শিল্প বৃদ্ধিকল্পে সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে। ফলে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। সুতরাং এই সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য বৃহত্তর বাজার প্রয়ােজন হয়।
(iii) বেকারত্ব : কলকারখানা স্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুটিরশিল্প বিনষ্ট হয়। এবং কৃষিকার্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, খাদ্য সংকট ও বেকারত্বের চাপ বহিঃবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
(B) রাজনৈতিক কারণ
(i) জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা : জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকেও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।।
(ii) রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা : অনেক সময় বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র সাম্রাজ্য স্থাপনকে জাতীয় দম্ভ বা জাতিগত গৌরব বলে মনে করত। আসলে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা জাহির করার জন্য দুর্বল রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণে লিপ্ত থাকত।
(C) সামাজিক কারণ
(i) উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার পুনর্বাসন : উনিশ শতক থেকে ইউরােপে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলানাে ও বাড়তি জনগণের পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থানের জন্য অনেক সময় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নতুন নতুন ভূখণ্ড দখলে লিপ্ত হতে শুরু করেছিল যা সাম্রাজ্যবাদের উত্থানে সহায়ক ছিল।
(ii) জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা : অনেক সময় জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দোহাই দিয়ে। বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্র দখলে ব্যস্ত থাকত যা সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটাতে সাহায্য করেছিল।
সাংস্কৃতিক কারণ
অনেক সময় পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অংশে সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলাে পৌঁছে দেওয়ার বাণী শুনিয়ে সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপােষকরা সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ঘটায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .