সম্পদ বহির্গমন
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ জয়ের পর কোম্পানী অষ্টাদশ শতক জুড়ে বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, বিভিন্ন পণ্য ও উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী নির্বিচারে। নিজেদের দেশে অর্থাৎ ইংল্যাণ্ডে প্রেরণ করেছিল। বিনিময়ে কোনাে অর্থ বা পণ্যসামগ্রী তাদের দেশ থেকে এদেশে আনেনি। ঐতিহাসিকদের মতে এই ঘটনাই সম্পদ নির্গমন বা সম্পদ বহির্গমন নামে পরিচিত।
সম্পদের এই নির্গমন হয়েছিল দুই ধারায় — ১) ব্যক্তিগত বাণিজ্যের মাধ্যমে এবং ২) অনুসৃত অর্থনীতি ও বাণিজ্যের মাধ্যমে। পলাশীর যুদ্ধের পর রাজনৈতিক ক্ষমতার ছত্রতলে থেকে কোম্পানীর কর্মচারীরা বাংলাকে ব্যক্তিগত বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছিল। ভেরেলস্ট, বারওয়েলের মতাে কোম্পানীর পদস্থ কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করে স্বদেশে পাঠিয়েছেন। বারওয়েল নিজেই স্বীকার করেছেন যে বাংলায় থাকাকালীন তিনি ৮০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলেন।
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানী দেওয়ানী ক্ষমতা পেলে এই আর্থিক নিষ্ক্রমনের প্রকৃতি ও পরিমাণ পাল্টে যায়। ইতিমধ্যে কোম্পানী ভারতীয় পণ্য ক্রয় করার জন্য ইংল্যাণ্ড থেকে রূপাে ও সােনার মুদ্রা ক্রয় করতাে। কিন্তু দেওয়ানী লাভের পর কোম্পানী বাংলার উদ্বৃত্ত রাজস্ব দিয়ে এদেশে পণ্য ক্রয় করতে শুরু করে। বিপনচন্দ্রের মতে, “১৭৬৫-১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে খরচা বাদ দিয়ে তার রাজস্বের মােট ৩৩ পণ্যের আকারে বাইরে পাঠিয়েছিল।” ডঃ জে.সি.সিনহা বলেছেন যে, ১৭৫৭-৮০ এই ২৪ বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের অর্থ সম্পদ ভারত থেকে নিষ্কাশিত হয়েছিল।
সম্পদ নির্গমণের ফলে ভারতের আর্থিক অবস্থা শােচনীয় হয়ে ওঠে। বাংলার সােনা, রূপা স্রোতের মতাে বেরিয়ে যায়। ফলে বাংলায় দেখা যায় মুদ্রা সংকট। অর্থনীতি থমকে দাঁড়ায়। রজনীপাম দত্তের মতে, অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের সম্পদ দিয়ে আধুনিক ইংল্যাণ্ড গড়ে উঠেছিল, সম্ভব হয়েছিল শিল্পবিপ্লব।
Read Also :
Comments ( 1 )
2 number এর প্রশ্ন বানিয়ে দাও
Hi! Karan, Welcome to StudyMamu
Tell me about the question in which chapter?
Thanks for visiting StudyMamu.COM : )