শিক্ষাক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব
শিক্ষার্থীর জীবনে গণমাধ্যমে (Massmedia) এর গুরুত্ব অসীম। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হল – সংবাদপত্র (Newspaper), চলচ্চিত্র (Cinema), বেতার (Radio), দূরদর্শন (Television) প্রভৃতি। শিক্ষাক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বগুলি হল—
[1] স্বতঃস্ফূর্ত শিখন
গণমাধ্যমে (Mass Media) শিক্ষার উপাদানগুলি অর্থাৎ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠক্রম ও শিক্ষালয়, নিয়মের কঠিন বাঁধনে বাঁধা থাকে না। এর ফলে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাকৃতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আঙিনা থেকে শিক্ষালাভ করে জীবন বিকাশের রসদ সংগ্রহ করতে পারে।
[2] সামাজিক বিকাশ
গণমাধ্যমগুলি যেমন— সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন ইত্যাদিতে ঘটনাবলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটে, নবচেতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। তাই সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষের কাছে সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব অসীম।
[3] মানসিক বিকাশ
জ্ঞানমূলক যে সকল তথ্যাদি গণমাধ্যমে পরিবেশিত হয় তাতে শিক্ষার্থীর মানসিক সংঘটনের ভিত দৃঢ় হয়, মানসিক বিকাশ ঘটে।
[4] রাজনৈতিক সচেতনতা
গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক চিত্রাবলি তুলে ধরা হয়।মানব সভ্যতার দোদুল্যমান প্রেক্ষাপটে একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষার্থীদের কাছে রাজনৈতিক সচেতনতার গুরুত্ব অসীম। তাই এই ক্ষেত্রে বাক্তি স্বার্থে তথা সমাজের স্বার্থে গণমাধ্যমগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
[5] পরিবর্তনশীল জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন
জগৎ পরিবর্তনশীল। ওই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সঙ্গে জগতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে অহরহ পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সেই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সংগতি বিধান করা একান্তই জরুরি। এই বিষয়ে গণমাধ্যমগুলি ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
[6] বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের বিকাশ
শিক্ষাক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব হল বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের বিকাশ ।বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেমন দূরদর্শন, রেডিয়ো, সংবাদপত্র প্রভৃতিতে বিষয়ভিত্তিক তথ্য পরিবেশিত হয়। ফলে প্রথাগত শিক্ষায় (Formal Education) শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত (Informal) এবং প্রথাবহির্ভূত (Non-formal) শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
[7] বৈজ্ঞানিক তথ্যাদিতে জ্ঞানার্জন
গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসামান্য অগ্রগতির সঙ্গে পরিচিত এবং মানব সভ্যতার উন্নয়নের ধারার অগ্রগতিতে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে।
[8] শিক্ষানীতি নির্ধারণ
চলমান জগতে শিক্ষা-দীক্ষা সংস্কৃতি সবই পরিবর্তনশীল। ওই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষানীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
[9] আগ্রহ বৃদ্ধি ও মনোযোগের বিকাশ
গণমাধ্যমে বিশেষ করে চলচ্চিত্রে ও দূরদর্শনে বিষয়গুলি চিত্রসহ পরিবেশিত হয় বলে শিক্ষার্থীরা উদ্দীপিত হয়। ফলে তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি এবং মনযোগ বিকশিত হয়।
[10] সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য
বেশ কিছু গণমাধ্যমের মাধ্যমে যে সকল তথ্যাদি পরিবেশিত হয় সেগুলির অধিকাংশই সর্বস্তরের। তাই শিক্ষিত, অশিক্ষিত, উচ্চবুদ্ধিসম্পন্ন, নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, জ্ঞানার্জন করতে পারে, জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণ করতে পারে।
[11] অপসংগতিমূলক আচরণের অপসারণ
গণমাধ্যমে প্রচারিত মূল্যবান তথ্যাদি অনেকসময় শিক্ষার্থীদের মন থেকে অপসংগতিমূলক আচরণ দূর করে, ফলে গণমাধ্যমের অবদানে ইতিবাচক দিকগুলি শিক্ষার্থীদের সামনে উন্মোচিত হয়, শিক্ষার্থীরা সমাজ জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
[12] ঘটমান তথ্যাদি সম্বন্ধে অবগতি
চির পরিবর্তনশীল জগতে ঘটে চলা নিত্য নতুন ঘটনা গণমাধ্যমের দ্বারা আমরা অবগত হতে পারি। জীবনপ্রবাহের সঙ্গে ঘটনা প্রবাহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
[13] পরিবেশ সচেতনতা
মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নিমিত্ত পরিবেশকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে চলেছে। ফলে পরিবেশ দিন দিন দূষিত হয়ে চলেছে, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে মানবদেহ জর্জরিত হচ্ছে। তাই পরিবেশ সম্বন্ধে চেতনা বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যাদি তুলে ধরা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য । ফলে মানুষ পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সুস্থ মূল্যবোধের অপমৃত্যু থেকে মানুষ বহুলাংশে রেহাই পাচ্ছে।
[14] অন্ধদের শিক্ষালাভে সহায়ক
অস্ত্রদের অন্যতম প্রধান ইন্দ্রিয় চক্ষু অকেজো হওয়ায় তারা বিশ্বকে সঠিকভাবে চিনতে বা জানতে বা চিনতে পারে না। গণমাধ্যমে বিশেষ করে বেতারে (Radio) প্রচারিত তথ্যাদি থেকে অথরা বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানার্জন করে মানসিক স্বাস্থ্যের (Mental Health) উন্নয়ন ঘটাতে পারে। ফলে জীবন পথের বন্ধুরতা কিছুটা হলেও দূর করতে সক্ষম হয়।
[15] চিত্তবিনোদন
আধুনিক সভ্যতার বহুমুখী ধারায় ও সংসারের ঘূর্ণিচক্রে দৈনন্দিন জীবন আজ মানুষের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বললে মনে হয় অত্যুক্তি হবে না। তাই মানব জীবনে চাই চিত্তবিনোদনের খোরাক। সেই খোরাকের অন্যতম পরিবেশক হল গণমাধ্যম (Massmedia)। গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংগীত, নৃত্য, নাটক, কৃষিকথার আসর, বয়স্কদের জন্য অনুষ্ঠান, ছোটোদের জন্য অনুষ্ঠান, খেলার ধারাবিবরণী প্রভৃতি মানবজীবনে এনে দেয় অনেকটা স্বস্তি। তাই প্রচ্ছায়া, উপচ্ছায়া ঘেরা মানবজীবন আজ অপমাধ্যমের দৌলতে অনেকটা আলোকমুখী হয়েছে। শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
[16] বহুমুখী উদ্দেশ্যসাধন
গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে যেমন তাত্ত্বিক দিকগুলি তুলে ধরা হয়, তেমনই ব্যাবহারিক দিকগুলিও উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং, গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে শিক্ষার্থীরা যেমন তত্ত্বগত পাঠ নিয়ে মনের বিকাশ ঘটাতে পারে, তেমনই গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ব্যাবহারিক দিকগুলি সম্বন্ধে অবস্থিত হয়ে জীবনপথ মসৃপ করতে বহুলাংশে সক্ষম হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .