প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ভারত প্রতিরক্ষা অর্জন আইন’ নামে এক প্রতিক্রিয়াশীল আইন প্রবর্তন করে। যুদ্ধ শেষ হলে এই আইনটির মেয়াদও শেষ হয়। ঠিক এসময়ই ভারতের বুকে পুনরায় বিপ্লবী কার্যকলাপ শুরু হয়। এই সংকটময় পরিস্থিতি মােকাবিলার জন্য ভারত সরকার একটি নতুন প্রতিক্রিয়াশীল আইনের প্রয়ােজন অনুভব করে এবং এই মর্মে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রি লর্ড চেম্বারলনের কাছে আবেদন জানায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতেসর্বপ্রকার বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ও রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের জন্য ভারত সরকার ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের এক কমিটি গঠন করে। সভাপতির নামানুসারে এই কমিটি রাওলাট কমিটি নামে পরিচিত।
রাওলাট আইন
এই কমিটির সুপারিশক্রমে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে কেন্দ্রিয় আইনসভায় দুটি দমনমূলক বিল উথথাপিত হয়। এই বিলে বলা হয় যে-
১) সরকার বিরােধী যে কোনাে প্রচারকার্য দন্ডনীয় বলে বিবেচিত হবে।
২) সন্দেহভাজন যে কোন ব্যাক্তিকে বিনা পরােয়ানায় বা বিনা বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে।
৩) সরকার বিনা পরােয়ানায় যে কোনাে ব্যক্তির গৃহ তল্লাশি করতে পারবে।
৪) জুরির সাহায্য ছাড়া গােপনে বিচারকরা বিচার করতে পারবে।
৫) এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনাে অ্যাপিল করা চলবে না।
৬) সংবাদপত্রের কণ্ঠ রুদ্ধ করার ব্যবস্থা হয়। কেন্দ্রিয় আইনসভায় সরকারি ও বেসরকারী সকল ভারতীয় সদস্যদের সমবেত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এই আইন ‘রাওলাট আইন’ নামে পরিচিত।
ভারতবাসীর প্রতিরােধ
রাওলাট আইন জারি হওয়ার পরে ভারতবাসী এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। জিন্না লিখলেন, “যে সরকার শান্তির সময় এই ধরণের নির্মম আইনের আশ্রয় নিয়েছে সেই সরকার কখনই সভ্য সরকার’ বলে দাবি করতে পারে।” শ্রী নিবাসন শাস্ত্রী লিখেছেন “It would hurt the good as well as the bad.” স্বয়ং গান্ধীজি একে কালা কানুন বলে অ্যাখ্যা দেন, এবং ভাইসরয়কে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা জানান। যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এতদিন তাঁর চোখে ছিল মঙ্গলময়’ তা এখন হল “শয়তানের প্রতিভূ। অমৃতবাজার পত্রিকা, দ্যা নিউ ইন্ডিয়া, বােম্বাই ক্রনিক্যাল প্রভৃতি পত্রিকাতেও তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে থাকে। গান্ধীজিও অহিংসা সত্যাগ্রহকে সম্বল করে সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস পথে সংগ্রামের ডাক দেন। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে প্রতিবাদীদের সমাবেশে জেনারেল ও ডায়ারের নির্দেশে নৃশংস গুলিবর্ষণ হয়। প্রাণ হারান ৩৭৯ জন ভারতবাসী। তবুও ভারতবাসীর বিদ্রোহ পিছু হটার পরিবর্তে আরাে তীব্র আকার ধারণ করেছিল। থিতিয়ে পড়া জাতীয় আন্দোলনে নতুন প্রাণের স্পন্দন দেখা দেয়। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজীর আর্বিভাব ঘটে অসহযােগ আন্দোলনের মাধ্যমে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .