মুম্বই নগর
মুম্বই বা বোম্বাই ভারতের বৃহত্তম নগর, সর্বশ্রেষ্ঠ সামুদ্রিক বন্দর, সর্ববৃহৎ ব্যাবসা- বাণিজ্য কেন্দ্র, সর্বপ্রধান শিল্পাঞ্চল এবং বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মুম্বই শহরকে ‘ভারতের প্রবেশ দ্বার’ বলা হয়।
ভারতের মূলধনের রাজধানী এবং ভারতের হলিউড’ নামেও মুম্বই শহর পরিচিত। বৃহত্তর মুম্বইয়ের মোট আয়তন হল ৪৮১ বর্গ কিলোমিটার।
১৯৯৬ সাল থেকে বোম্বাই মহানগরটির নাম পাল্টে হয়েছে মুম্বই। এই অঞ্চলের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবী ‘মুম্বা’র নাম অনুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। মুম্বই ভারতের সর্বাপেক্ষা জনবহুল মহানগর এবং পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহরগুলির মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে।
■ [১] অবস্থান
ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তীরে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বই, লাভা গঠিত ছোটো ছোটো সাতটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এবং সেতু দিয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত।
■ [২] যাতায়াত ও পরিবহন
পশ্চিম রেলওয়ে ও তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য রেলপথের মাধ্যমে এবং সড়কপথে মুম্বই নগর ভারতের অন্যান্য প্রধান শহর এবং শিল্পকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। মধ্য ও পশ্চিম রেলওয়ের সদর দপ্তর মুম্বইতে অবস্থিত। ভারতে নির্মিত প্রথম রেলপথটি এই শহরেই ১৮৫৩ সালে নির্মিত হয়। মুম্বই-এর সান্তাক্রুজ বিমানবন্দরটি পৃথিবীর একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ভারতের বৃহত্তম বিমানবন্দর। বর্তমানে সান্তাক্রুজ বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে ‘জওহরলাল নেহরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। ইউরোপ, আমেরিকা প্রভৃতি মহাদেশে বিমানপথে যাতায়াতের জন্য সান্তাক্রুজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিই ব্যবহৃত হয়।
■ [৩] বন্দর
মুম্বই বন্দর ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ সামুদ্রিক বন্দর। মুম্বই-এর বন্দর এলাকায় উৎকৃষ্ট স্বাভাবিক পোতাশ্রয় থাকায় জাহাজগুলো নোঙ্গর করে সহজে মাল খালাস করতে পারে এবং ডক এলাকায় মেরামতিও সেরে নিতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা প্রভৃতি মহাদেশ থেকে আগত বিদেশি জাহাজগুলো বোম্বাই বন্দরের মাধ্যমে প্রথমে ভারতের সঙ্গে যোগসূত্র। স্থাপন করে বলে মুম্বইকে ‘ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলে।
■ [৪] ৰাণিজ্যকেন্দ্ৰ
মুম্বই ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র। ভারতের অধিকাংশ ব্যাঙ্ক এবং সওদাগরী অফিসের প্রধান কার্যালয় এখানে অবস্থিত হওয়ায় মুম্বইকে “ভারতের মূলধনের রাজধানী “বলা হয়।
■ [৫] শিল্পাঞ্চল
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই বৃদ্ধি পেয়ে মুম্বই শিল্পাঞ্চল বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম ও শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। মুম্বই ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বস্ত্র বয়ন শিল্পকেন্দ্র। এছাড়া সিল্ক, রেয়ন, কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্র এবং বনস্পতিজাত দ্রব্যের বৃহদায়তন শিল্প এই অঞ্চলে অবস্থিত। মুম্বইতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কৃত্রিম সার, পেট্রোকেমিক্যাল, ঔষধ ও ঔষধজাত দ্রব্য, রাসায়নিক দ্রব্য, বনস্পতি, নানান ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য, ফটোগ্রাফি প্রভৃতি শিল্পের কারখানা আছে। মুম্বইয়ের ভাবা পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র এবং ট্রম্বের তৈল শোধনাগারটি প্রসিদ্ধ। তারাপুর পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি মুম্বইয়ের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত।
■ [৬] চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র
মুম্বই, ভারত তথা সারা পৃথিবীর এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র। ভারতের অধিকাংশ হিন্দী চলচ্চিত্র মুম্বইতে নির্মিত হয়। নিকটবর্তী বান্দ্রা, জুহু প্রভৃতি প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র।
■ [৭] শিল্প সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থান
মুম্বইতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাইকোর্ট আছে। মুম্বই শহরে প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে মেরিনড্রাইভ, এলিফ্যান্টা দ্বীপ, তারাপুর অ্যাকোরিয়াম, জুহু বীচ, হ্যাংগিং গার্ডেন প্রভৃতি দেখতে সারাবছর ধরে এই শহরে প্রচুর পর্যটক আসেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .