মরুকরণ
যে প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর উষ্ণ মরুভূমির প্রান্তভাগে পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে বা মরুসংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত প্রায় শুষ্ক অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়ে মরুভূমির আয়তন বৃদ্ধি হয়, সেই প্রক্রিয়াকে মরুকরণ বলে।
মরুকরণের কারণ
মরুকরণের জন্য মূলত নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ী :
(১) আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন
যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করার ফলে মৃত্তিকার উপরিভাগ আলগা হয়ে স্থানিক আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়, আবহাওয়ার তাপমাত্রা ও বায়ুর গতি পরিবর্তিত হয় এবং এতে মৃতিকার উস্ত্ররিস্তরের পরিবর্তন ঘটে মরুকরণ সংঘটিত হয়।
(২) যথেচ্ছভাবে জমির ব্যবহার
ভূমির মরুতে রূপান্তরের কারণ হল বনভূমির নিধনীকরণ। নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করায় মৃত্তিকার উপরিভাগ বৃষ্টির জলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অবৈজ্ঞানিকভাবে জমি কর্ষম, গোচরণ ভুমির তৃণকে নির্মূল করে যা ভূমিক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভূমিক্ষয়ের ফলেও বনভূমি ধ্বংস হয়। এর ফলে সমুদ্র উপকূলের নিচু পাহাড় তা বালিয়াড়ি হতে বালি বায়ুতাড়িত হয়ে ওই সমস্ত রুক্ষ তৃণহীন অঞ্চলে ক্রমে ক্রমশ মরুভূমির আকার নেয়।
(৩) অবৈজ্ঞানিক সেচ ব্যবস্থা
অবৈজ্ঞানিক জলসেচের ফলে জমি লবণাক্ত হয় ও ভূমিক্ষয় ঘটে। এর ফলে জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস পায় এবং মরুকরণ দেখা দেয়।
মরুকরণের ক্ষতিকর প্রভাব
(i) মরুকরণের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাসপ্রাপ্ত হয় ও মানুষের জীবিকা নির্বাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
(ii) মরুকরণের দরুন গবাদি পশুদের চারণযোগ্য জমির অভাব দেখা দেয় এবং পশুপালন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(iii) মরুকরণ যে সব অঞ্চলে ঘটেছে সেখানে জলসেচ পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করা হলে জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
মরুকরণ প্রতিরোধের বিভিন্ন পদ্ধতি
(i) যথাযথভাবে তৃণভূমি ও বনভূমি সংরক্ষণ করতে হবে। বনসৃজন করে এদের আয়তন ক্রমশ বাড়াতে হবে।
(ii) সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টি করতে হবে।
(iii) মরুভূমি সংলগ্ন স্থানে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।
(iv) নিয়মিতভাবে পশুচারণ করতে হবে।
(v) খরা প্রতিরোধকারী শস্য উৎপাদন করতে হবে।
(vi) বূমির বহন ক্ষমতা অনুসারে জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
(vii) মাটির নিচের জলভাণ্ডারকে সর্বদা সঠিকভাবে সঞ্চিত রাখতে হবে।
(viii) মরুকরণের কারণ ও তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জনসচতেনতা গড়ে তুলতে হবে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .