দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ব্রিটেনে ক্লিমেন্ট এটলির নেতৃত্বে শ্রমিক দলের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এটলি ভারতীয় রাজনীতির বাস্তব রুপ উপলদ্ধি করে এই সিদ্ধান্ত নেন যে, ভারতকে স্বাধীনতা দান ব্যাতীত গত্যন্তর নেই। ভারতের স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয় আলােচনার জন্য তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার তিন সদস্যকে ভারতে পাঠাবার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। এই দলটি মন্ত্রি মিশন’ নামে পরিচিত। ১৯৪৬ খ্রিঃ ২৪ শে মার্চ ভারত সচিব স্যার। পেথিক লরেন্স সহ দুজন মন্ত্রি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ও এ.ভি.আলেকজান্ডার দিল্লীতে হাজির হন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ ঐক্যমতে আসতে ব্যর্থ হলে ১৬ মে মন্ত্রি মিশন নিজস্ব পরিকাঠামাে ঘােষণা করে।
মন্ত্রি মিশনের প্রস্তাব
মন্ত্রি মিশনের প্রধান প্রস্তাবগুলি হল—
১) ভারতবর্ষে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে। দেশীয় রাজ্যগুলি পরে এই যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দিতে পারবে।
২) কেন্দ্রিয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করা হবে। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যােগাযােগের দায়িত্ব পাবে কেন্দ্র। অনান্য বিষয়ে থাকবে প্রদেশের হাতে।
৩) হিন্দু প্রধান প্রদেশগুলিকে ‘ক’, মুসলিম প্রধান প্রদেশগুলিকে ‘খ’, এবং বাংলা ও আসামকে ‘গ’, শ্রেণিতে বিভক্ত করা হবে।
৪) প্রদেশগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠন করা হবে।
৫) নতুন সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের পর কোন রাজ্য ইচ্ছা করলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে পারবে।
৬) নতুন সংবিধান চালু না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারশাসন পরিচালনা করবে।
মন্ত্রি মিশন প্রস্তাবের গুরুত্ব
মন্ত্রি মিশনের প্রস্তাবগুলি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১) দেশীয় প্রদেশের জনগণকে এর আগে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযােগ দেওয়া হয়নি।
২) তাছাড়া পাকিস্তান সৃষ্টি না করে একটি অখন্ড ভারত গঠনের এটাই ছিল শেষ আন্তরিক প্রয়াস।
৩) গণপরিষদে শুধুমাত্র ভারতীয়রাই থাকবে, কোন ব্রিটিশ প্রতিনিধি থাকবে না এই মর্মে প্রস্তাব ঘােষণা থাকায় ভারতীয়দের দীর্ঘ দিনের দাবিকে মন্ত্রি মিশন মেনে নিয়েছিল।
৪) ভারতীয় শাসনতন্ত্র রচনার ক্ষেত্রে গণপরিষদকেই সার্বভৌম ক্ষমতা দেওয়া হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .