মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী কয়েক বছরে ভারতে উল্লেখযােগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তন। ভারতসচিব এডুইন স্টানলি মন্টেগু ও ভারতসচিব লর্ড চেমসফোর্ড মিলিতভাবে এই আইনের প্রবর্তন করেন তাই তা মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন (১৯১৯ খ্রিঃ) নামে পরিচিত।
মন্টেগু চেমসফোর্ড আইনের শতাবলি
এই আইন দ্বারা (১) কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করে দেওয়া হলাে। (২) কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণভাবে ভাইপ্রয় ও তার কার্যনির্বাহক সভার (Executive Council) হাতেই ন্যস্ত থাকে। তারা কেন্দ্রীয় আইনসভার কাছে না থেকে সেক্রেটারী অফ-স্টেট মারফত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকবেন।(৩) কেন্দ্রীয় আইনসভাকে রাষ্ট্রপরিষদ (Council of States) ও আইন পরিষদ (Legislative Assembly) নামে দুটি কক্ষে বিভক্ত করা হল, তাদের সদস্যসংখ্যা কিছুটা বেড়ে নির্বাচিত সভ্যবৃন্দের সংখ্যাধিক্য সৃষ্টি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৩৪ জন নির্বাচিত সদস্য থাকবে এবং নিম্নকক্ষে ১৪০ জন সদস্যের মধ্যে ১০০ জন নির্বাচিত সদস্য থাকবে; (৪) সাম্প্রদায়িক নিবাচন-ব্যবস্থা বজায় থাকে। (৫) যদিও কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক গভর্নমেন্টের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছিল তথাপি কেন্দ্রীয় আইনসভা সমগ্র ভারতের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছিল। আবার কোনাে বিল আইনপরিষদ কর্তৃক নাকচ হলে গভর্নর-জেনারেলকে তা আইনে পরিণত করবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। (৬) প্রাদেশিক আইনসভার শতকরা ৭০ জন সদস্য নির্বাচিত ও শতকরা ৩০ জন সদস্য মনােনীত করার ব্যবস্থা হয়।
গভর্নর-শাসিত প্রদেশগুলিতে শাসনকার্য সংরক্ষিত (Reserved) ও হস্তান্তরিত (Transferred) এই দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। সপারিষদ গর্ভনরের হাতে সংরক্ষিত বিষয়গুলির দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। অন্যদিকে হস্তান্তরিত বিষয়গুলির দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত মন্ত্রীসভার ওপর ন্যস্ত হয়। এই কারণে প্রাদেশিক শাসনপদ্ধতি দ্বৈতশাসন (Dyarchy) নামে পরিচিত। পুলিশ, জেল, রাজস্ব, বিচার প্রভৃতি বিষয়গুলি ছিল সংরক্ষিত। শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি বিষয় মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত হয়।
সমালােচনা
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের প্রশাসনিক সংস্কারে প্রত্যক্ষ নির্বাচন-নীতি স্বীকৃত হলেও এবং কতকগুলি প্রাদেশিক বিভাগ হস্তান্তরিত হওয়া সত্ত্বেও (১) ভারতবাসীকে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। (২) কেন্দ্রে সব ক্ষমতা বড়লাটের হাতে কেন্দ্রীভূত রাখা হয়।(৩) প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে গর্ভনরবা ছােটোলাটকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নাকচ করার অধিকার দেওয়া হয়। ফলে ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্খ অপূর্ণ থেকে যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .