প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতে নারীশিক্ষা
প্রাচীন ভারতে শিক্ষার অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বৈদিক সমাজে নারীদের স্থান ছিল অতি উচ্চে। নারীদের বেদ পাঠে অধিকার ছিল এবং তারা যাগযজ্ঞতে অংশগ্রহণ করত। গুরুগৃহে বসবাস করে বেদ অধ্যায়ন করতে পারত। বৈদিক যুগের অনেক নারী মন্ত্রদ্রষ্টাও ছিলেন। যেমন—বিশ্ববারা, ঘোষা, লোপামুদ্রা, অপালা প্রমুখ।
মহাকাব্যের যুগেও নারীদের শিক্ষা ও জ্ঞানকে যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হত। রামায়ণে কৌশল্যা ও তারাকে মন্ত্রবিদ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে দ্রৌপদীকে মন্ডিতা বলা হয়েছে। উপনিষদে উল্লেখ আছে নারীগণ ব্রহ্ম সম্পর্কীয় আলোচনায় বা বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। প্রাচীনভারতে নারীগণ অধ্যাপনাও করতেন। একটু লক্ষ করলে দেখা যায় যে বৈদিক যুগের সূচনাকাল থেকে উপনিষদ ও মহাকাব্যের কাল পর্যন্ত ভারতীয় সমাজে নারীদের শিক্ষায় তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি।
কিন্তু সূত্রযুগে রক্ষণশীলতার কারণে মেয়েদের স্বাধীনতা অনেকাংশে লুপ্ত হয়। নানা কারণে নারীদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। চালু হয় বাল্যবিবাহ, ফলে অল্প বয়স থেকেই অন্তঃপুরে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। মনুসংহিতায় উল্লেখিত বিধানে দেওয়া আছে নারীরা বাল্যে পিতার, যৌবনে পতির, বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকবে। এ থেকে বোঝা যায় যে নারী স্বাধীনতা অনেকাংশে খর্ব হতে থাকে।
বৌদ্ধ যুগের প্রথম দিকে নারীর স্থান ছিল গৌণ। বৌদ্ধবিহারে নারীর স্থান ছিল না। পরবর্তীকালে গৌতমী ও প্রিয় শিষ্য আনন্দের আগ্রহে বৌদ্ধ শিক্ষায় নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়। যদিও বহুবিধ বিধিনিষেধ মেনে তাদের লেখাপড়া শিখতে হত। এই সময়ের গুণী মহিলারা হলেন—শ্রমণী, শবরী, আম্রপালী, সুপ্রিয়া প্রমুখ।
মধ্যযুগে নারী শিক্ষা
মধ্যযুগে মুসলিম রাজত্বকালে পর্দাপ্রথা চালু হওয়ার কারণে মুসলিম নারীরা গতানুগতিক বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষালাভে বঞ্চিত হয়। আবার অন্য দিকে হিন্দুরা জাত-ধর্ম নষ্ট হওয়ার ভয়ে নারীদের গৃহ-পরিবেশে সংরক্ষণ করতে বাধ্য হয়। দেশের সাধারণ অবস্থা নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের সহায়ক ছিল না। তবে বিত্তবান হিন্দু-মুসলমানগণ বাড়িতে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .