সূচনা
ব্রিটিশ ভারতে যখন পাশ্চাত্য শিক্ষার প্লাবন আসে তখন বাঙালি তথা ভারতীয় সমাজে ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহ দেখা দেয়। যদিও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই আগ্রহ ছিল বেশি। বাস্তবতার প্রয়োজনেই ভারতবাসী ইংরেজি শিক্ষার অনুভব করে।
দেশীয় শিক্ষার অবনতি
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেন যে, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে মধ্যবিত্ত বাঙালির মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহ দেখা দেয় এবং দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সমাধি রচিত হয়।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব
কিছুটা বুজি রোজগারের তাগিদ আর কিছুটা পশ্চিমি শিক্ষা ও উদারনৈতিক চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রেরণায় অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে একদল বাঙালি ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেকে ইংরেজদের করণিক, দোভাষি, দেওয়ান হিসেবে কাজ করত। দেশে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার ঘটায় অনেকে ডাক্তার উকিল, শিক্ষক ও সাংবাদিকতার পেশায় নিযুক্ত হয়। বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত এইসব ইংরেজি শিক্ষিত মানুষরাই হল প্রকৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব এর ফল
ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের ফলে গ্রামীণ পরিবারকেন্দ্রিক জীবনের পরিবর্তে এই শ্রেণি ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবারের জন্ম হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিভেদ প্রথা ও কুসংস্কারের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে পড়ে এবং তার ফলে জন্ম নেয় যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ ও প্রগতিবাদ।
সর্বোপরি মধ্যবিত্ত শ্রেণি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ফলে দেশ-বিদেশের উন্নত দর্শনের সান্নিধ্য লাভ করে। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ফরাসি বিপ্লব এই সকল আদর্শের সংস্পর্শে এসে তারা ব্রিটিশ শাসনের কুফল উপলব্ধি করে এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকে।
উপসংহার
ভারতবাসী বিশেষত বাঙালি সম্প্রদায় পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির যাদুস্পর্শে কুসংস্কারমুক্ত হয় এবং রাজনীতি, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে তাদের মধ্যে জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। যার চুড়ান্ত পরিণতি হল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি।
Frequently Asked Questions
'জমিদার সমিতি' কে, কবে গঠন করেন?
১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় জমিদার সমিতি (Landholders Society) প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি কবে, কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের জনগণের অবস্থা ইংল্যান্ডে প্রচার করা এবং ইংল্যান্ডবাসীর সহানুভূতি লাভ করা।
কে, কবে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা করেন।
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ইংরেজি ভাষাকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .