ভূমিকম্প তরঙ্গ
পুকুরের কোনো জায়গায় ঢিল ছুঁড়লে, যেখানে ঢিলটি পড়ল সেখান থেকে (অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে) চক্রাকারে চারিদিকে ঢেউগুলো যেমন ছড়িয়ে পড়ে, ভূমিকম্পের কম্পন ঠিক সেইভাবে তরঙ্গের আকারে ভূমিকম্প কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প কেন্দ্র থেকে প্রবাহিত এই তরঙ্গকেই ভূমিকম্প তরঙ্গ বলা হয়।
ভূমিকম্প তরঙ্গের শ্রেণিবিভাগ
ভূমিকম্পের ফলে উদ্ভূত চাপের ফলে তিন রকমের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, যেমন : (১) প্রাথমিক তরঙ্গ; (২) গৌণ বা দ্বিতীয় তরঙ্গ এবং (৩) পার্শ্ব বা পৃষ্ঠ তরঙ্গ।
(১) মুখ্য বা প্রাথমিক তরঙ্গ (Primary Wave)
এই তরঙ্গ ভূ-স্তরের ক্রম সংকোচনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। ভূমিকম্পের প্রাথমিক তরঙ্গকে সংনমন ঢেউ (Compression Wave) অথবা টানা ও ঠেলা ঢেউ’ (Push & Pull Wave)-ও বলা হয়। সবচেয়ে দ্রুতগামী এই তরঙ্গই প্রথমে উপকেন্দ্রে পৌছায়। ভূমিকম্পের তরঙ্গের মধ্যে প্রাথমিক তরঙ্গের গতিবেগই সবচেয়ে বেশি, সেকেন্ডে ৫ থেকে ১৪ কিলোমিটার।
(২) গৌণ বা দ্বিতীয় তরঙ্গ বা সেকেন্ডারী ওয়েভ (Secondary Wave)
প্রাথমিক তরঙ্গের পর গৌণ তরঙ্গ প্রধানত ধাক্কার মাধ্যমে ভূস্তরের একপাশ থেকে অন্য পাশে প্রবাহিত হয়ে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রে পৌঁছায়। গৌণ তরঙ্গকে তির্যক তরঙ্গ (Transverse Wave) বা ঝাঁকুনি ঢেউ (Shaking Wave)-ও বলা হয়। গৌণ তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে ৩.৫ কিমি থেকে ৭.২ কিমি হয়ে থাকে।
মুখ্য বা প্রাথমিক তরঙ্গ এবং গৌণ বা দ্বিতীয় তরঙ্গ ভূগর্ভে অবস্থিত ভূ-কম্পন কেন্দ্র থেকে ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।
(৩) পার্শ্ব তরঙ্গবা পৃষ্ঠ তরঙ্গবা সারফেস ওয়েভ (Surface Wave)
উপকেন্দ্র থেকে অপর একটি তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, একে পার্শ্ব তরঙ্গ বা পৃষ্ঠ তরঙ্গ বলে। পার্শ্ব তরঙ্গ বা সারফেস ওয়েভ মুখ্য ও গৌণ তরঙ্গের যুক্ত প্রভাবে সবশেষে সৃষ্টি হয় এবং কেবলমাত্র ভূ-ত্বকের উপরিভাগ দিয়ে সঞ্চারিত হয়। অপর দুটি তরঙ্গের তুলনায় এটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই পার্শ্ব তরঙ্গের প্রভাবেই সাধারণত ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
সমতীব্রতা রেখা (Isoseismal Line)
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলো থেকে যতই দূরে যাওয়া যায়, ভূমিকম্পের তীব্রতা ততই কমতে থাকে। যে সব কাল্পনিক রেখার সাহায্যে ভূমিকম্পের সমতীব্রতা বিশিষ্ট স্থানগুলোকে যুক্ত করা হয় তাদের সমতীব্রতা রেখা বলে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .