ভূগোল কাকে বলে
ইংরেজি ভাষায় জিয়োগ্রাফী (Geography) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘Ge’ (অর্থাৎ পৃথিবী) এবং ‘graphi’ (অর্থাৎ বর্ণনা) শব্দ থেকে, এর খুব সহজ সরল অর্থ হল ‘পৃথিবীর বর্ণনা’। আগেকার দিনে ভূগোল বলতে পৃথিবীর ভৌগোলিক গঠন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রকৃতি ও তাদের জীবনযাত্রার বর্ণনাকেই বোঝানো হত।
কিন্তু আধুনিকযুগের ভূগোল শাস্ত্র পৃথিবীর ভূমিরূপের স্বরূপ ও প্রকৃতি আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, সামাজিক রীতিনীতি, রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তাকেও তার বিষয়সূচির অঙ্গীভূত করেছে। বিখ্যাত ভূবিজ্ঞানী Huntington-এর মতে, “The central theme of geography is the explanation of the part played by the land, the water and the air in causing the plants, animals and people of one region that differs from those of other regions”. অর্থাৎ ভূমি, জল এবং বাতাস কীভাবে এক অঞ্চলের অরণ্য,জীবজন্তু ও মানুষের জীবনযাত্রা অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক করেছে—তার প্রকৃতি বিশ্লেষণই হল আধুনিক ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয়।
ভূগোলের শ্রেণিবিভাগ
ভূগোল মানুষের সঙ্গে পৃথিবী ও প্রকৃতির সম্পর্কের হদিস দেয়। তাই আধুনিক ভূগোলের দুটি প্রধান অঙ্গ রয়েছে, এরা হল : প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography) এবং আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক ভূগোল ( Regional, Economic & Homan Geography) |
ভূগোলের পরিধি ও লক্ষ্য বিশ্লেষণ
ভূগোলের পরিধি এবং লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে আমাদের মনে নানান প্রশ্নের উদয় হয়। প্রথমত, আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রাকৃতিক ভূগোলের লক্ষ্য কী? এর উত্তরে বলা যায় যে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যদি বোঝা বা জানা না যায়, অর্থাৎ প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্পর্কে যদি আমাদের জ্ঞান না থাকে তবে নানান প্রাকৃতিক ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে আমরা নিজেদের বাঁচাতে পারবো না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন জ্ঞানের সাহায্যে আমরা প্রকৃতিকে নানান কাজে লাগাতে পারি।
দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক ভূগোলের লক্ষ্য কী? এই ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষের ওপর সেই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুগত পরিবেশের প্রভাব, জনবসতি ও জনঘনত্ব, শহর ও বন্দর, অর্থনৈতিক সম্পদ (যেমন : জল সম্পদ, বন সম্পদ, কৃষি সম্পদ, খনিজ সম্পদ, শক্তি সম্পদ প্রভৃতি) এবং বিভিন্ন শিল্প ও শিল্পকেন্দ্রের অবস্থান ও সম্ভাবনার হদিস দেয়। আবার সব ধরনের সম্পদ সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ, কারণ কোনও প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক উপাদানকে তখনই সম্পদ বলা যায়, যখন তা মানুষের কাজে লাগে। মানুষ যেমন সম্পদ সৃষ্টি করে, তেমনি তা ভোগ করে এবং ধ্বংস করে। সম্পদ সৃষ্টিতে মানুষের অনন্যসাধারণ ভূমিকার জন্য বর্তমানে মানবিক ভূগোল (Human Geography)-কেও ভূগোল শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে, মানুষ প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে, তার দৈনন্দিন জীবনকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার প্রকৃতিকে অতি ব্যবহারের কুফল হিসেবে পরিবেশ দূষণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি নানা বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমানে তাই পরিবেশ ভূগোলকেও (Environmental Geography) ভূগোলের বিষয় সূচির অঙ্গীভূত করা হয়েছে।
Frequently Asked Questions
আধুনিক ভূগোলের প্রধান অঙ্গ দুটি কী কী?
আধুনিক ভূগোলের দুটি প্রধান অঙ্গ রয়েছে, এরা হল : প্রাকৃতিক ভূগোল এবং আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক ভূগোল।
প্রাকৃতিক ভূগোলের সাহায্যে আমাদের কী কী উপকার হয়?
বভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যদি বোঝা বা জানা না যায়, অর্থাৎ প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্পর্কে যদি আমাদের জ্ঞান না থাকে তবে নানান প্রাকৃতিক ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে আমরা নিজেদের বাঁচাতে পারবো না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন জ্ঞানের সাহায্যে আমরা প্রকৃতিকে নানান কাজে লাগাতে পারি।
অর্থনৈতিক ভূগোল আমাদের কোন্ কোন্ সম্পর্ক জানতে সাহায্য করে?
অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষের ওপর সেই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুগত পরিবেশের প্রভাব, জনবসতি ও জনঘনত্ব, শহর ও বন্দর, অর্থনৈতিক সম্পদ (যেমন : জল সম্পদ, বন সম্পদ, কৃষি সম্পদ, খনিজ সম্পদ, শক্তি সম্পদ প্রভৃতি) এবং বিভিন্ন শিল্প ও শিল্পকেন্দ্রের অবস্থান ও সম্ভাবনার হদিস দেয়।
মানবিক ভূগোলকে ভূগোল শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেন?
সব ধরনের সম্পদ সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ, কারণ কোনও প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক উপাদানকে তখনই সম্পদ বলা যায়, যখন তা মানুষের কাজে লাগে। মানুষ যেমন সম্পদ সৃষ্টি করে, তেমনি তা ভোগ করে এবং ধ্বংস-ও করে। সম্পদ সৃষ্টিতে মানুষের অনন্যসাধারণ ভূমিকার জন্য বর্তমানে মানবিক ভূগোল (Human Geography)-কেও ভূগোল শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে পরিবেশকেও ভূগোল শাস্ত্রের বিষয়সূচীর অঙ্গীভূত করা হয়েছে কেন?
প্রকৃতিকে অতি ব্যবহারের কুফল হিসেবে পরিবেশ দূষণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি নানা বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমানে তাই পরিবেশ ভূগোলকেও (Environmental Geography) ভূগোলের বিষয় সূচির অঙ্গীভূত করা হয়েছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .