ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার জন্য গান্ধিজি যে তিনটি আন্দোলন পরিচালনা করেন তার মধ্যে ব্যাপকতায় ও মেজাজে ভারত ছাড়ো আন্দোলন হল অনন্য। অন্য দুটি আন্দোলনের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এখানে লক্ষ্য ছিল স্থির, জাতি বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েছিল।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন
গান্ধিজি ঘোষণা করেছিলেন যে এটি হবে তাঁর শেষ সংগ্রাম, এ সংগ্রামে হয় তিনি জয়ী হবেন, নয় মরবেন (করঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে)। আগস্ট আন্দোলনের সময় গান্ধিজি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, সারাজীবন অহিংসার পূজারি আক্রমণ প্রতিহত করার কথাও ভেবেছিলেন। হরতাল, ধর্মঘট, রেল অবরোধ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করাতে তাঁর আপত্তি ছিল না। গান্ধিজি নির্দেশ দেন যে নেতারা বন্দি হলে আন্দোলন থেমে যাবে না, প্রত্যেক স্বাধীনতাকামী ভারতবাসী হবেন নিজের নেতা। ব্যাপ্তির দিক থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন আগের সব আন্দোলনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বডোলাট লিনলিখগো স্বীকার করেছিলেন যে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর ইংরেজদের এর চেয়ে বড়ো সরকার বিরোধী প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি।
ব্রিটিশ সরকারের নথিপত্রে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য কংগ্রেস নেতাদের অক্ষশক্তির প্রতি সহানুভূতিকে দায়ী করা হয়েছে। সুমিত সরকার তথ্য প্রমাণসহ দেখিয়েছেন যে ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তির কাছে কংগ্রেসি নেতাদের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করবার জন্য শাসকগোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল। কংগ্রেসি নেতাদের অনেকে, এমনকি গান্ধিজিও, যুদ্ধে মিত্রপক্ষের পরাজয় অনিবার্য ধরে নিয়েছিলেন। তবে অক্ষশক্তির প্রতি এদের গোপন সহানুভূতি ছিল তা বলা যায় না। ৯ আগস্টের আগে কংগ্রেস হিংসাশ্রয়ী বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেছিল কি না তা নিয়েও বেশ সন্দেহ আছে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলেও কংগ্রেস হিংসাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা করেনি। ব্রিটিশ সরকারের নিষ্ঠুর দমননীতি কংগ্রেসকে বিদ্রোহের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। সমস্ত রকমের আলাপ আলোচনা বন্ধ করে বড়ো রকমের আঘাত হেনে আন্দোলনের সম্ভাবনা নষ্ট করার ব্রিটিশ চক্রান্ত আগস্ট বিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্ররোচনা হিসেবে কাজ করেছিল।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার পিছনে দুটি ঘটনা প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। একটি হল ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল মাসের ক্রিস মিশনের ব্যর্থতা এবং অপরটি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অভাবনীয় সাফল্য। ক্রিস মিশনের ব্যর্থতা ভারতীয় নেতাদের চোখ খুলে দিয়েছিল। একথা পরিষ্কার হয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়। বড়ো ধরনের আন্দোলন ছাড়া ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেবে না। জাতীয় কংগ্রেস এজনা আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জাপান সিঙ্গাপুর, মালয় ও ব্রহ্মদেশ অধিকার করলে ব্রিটিশের সামরিক ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল, সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছিল এক স্থূল বর্ণবিদ্বেষ। সিঙ্গাপুর, মালয় ও ব্রহ্মদেশের ইউরোপীয়রা সব যানবাহন দখল করে নিয়ে পালিয়েছিল, ভারতীয়দের কথা ভাবেনি। এজন্য ভারতীয়দের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ বিদ্বেষ দেখা দিয়েছিল, ভারতীয়রা দুর্দশার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। বার্মার রণক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকরা দেশে ফিরে একই সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ বিরোধী ও যুদ্ধ বিরোধী হয়ে উঠেছিল।
বিহার ও উত্তরপ্রদেশে এই ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল যে ব্রিটিশ শাসনের অবসান আসন্ন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে যাঁরা দেশে ফিরেছিলেন তাঁরা এই ধারণা ছড়িয়ে দেন। যুদ্ধের সময় পূর্ব ভারতে জাপানি আক্রমণের ভয়ে ইংরেজরা ‘পোড়ামাটি নীতি’ অনুসরণ করেছিল। এজন্য পূর্ব বাংলার মানুষ খুব অসুবিধার মধ্যে পড়েছিল। যুদ্ধের সময় বহু ব্রিটিশ, মার্কিন ও অস্ট্রেলিয়ান সৈন্য ভারতে এসেছিল। এরা এদেশের মানুষজনের সঙ্গে, বিশেষ করে মহিলাদের সঙ্গে, অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করত। কংগ্রেস এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ জানাত, জনমত ব্রিটিশবিরোধী হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল, ব্রিটিশ সরকার নিজের দেশের মতো এখানে কঠোর রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেনি। ভারতে এমনিতে খাদ্যাভাব ছিল, মিত্রপক্ষের বিপুল সৈন্যবাহিনী ভারতে এলে ভারতীয়দের আশঙ্কা হয় খাদ্যাভাব আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক ছিল না।
পূর্ব সীমান্তে জাপানি আক্রমণ শুরু হলে গান্ধিজির ধারণা হয় জাপানের শত্রু ইংল্যান্ড ভারত ছেড়ে চলে গেলে জাপানি আক্রমণের অবসান ঘটবে। জাপানের সঙ্গে ভারতের কোনো বিরোধ নেই। গান্ধিজি আরও বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীন ভারত জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে। কংগ্রেসের মধ্যে সরকার-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে মতভেদ ছিল, নেহরু ও আজাদ মনে করেন এসময় আন্দোলন হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি লাভবান হবে। এ ধরনের যুক্তি গান্ধিজিকে বিচলিত করেনি। তিনি আন্দোলনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। অনেক আলাপ-আলোচনার পর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই ওয়ার্ধায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। ৮ আগস্ট বোম্বে শহরে এ. আই. সি. সি. এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছিল। ১ আগস্ট গান্ধিজিসহ কংগ্রেসের প্রথম সারির সব নেতাকে বন্দি করার সঙ্গে সঙ্গে আগস্ট আন্দোলন বা আগস্ট বিপ্লব শুরু হয়ে যায়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঝটিকা কেন্দ্রগুলি ছিল বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক। কমবেশি সব প্রদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। গোড়ার দিকে আন্দোলন হয়েছিল বড়ো বড়ো শহরগুলিতে কলকাতা, বোম্বে, দিল্লি, আমেদাবাদ, লখনউ, নাগপুর ও কানপুরে। সরকার জোর করে হরতাল, ধর্মঘট, শোভাযাত্রা, সভা-সমিতি বন্ধ করেছিল, এজন্য গ্রামাঞ্চলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। ছাত্ররা কৃষকদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে কোনো কোনো স্থানে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হয়। মেদিনীপুরের তমলুক, ওড়িশার তালচের এবং মহারাষ্ট্রের সাতারায় এ ধরনের জাতীয় সরকার গড়ে তোলা হয়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলন ছিল তীব্রতম, পরে অনেকখানি স্তিমিত হয়ে পড়েছিল তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। এই আন্দোলন সর্বভারতীয় রূপ পরিগ্রহ করলেও উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি অফিস, আদালত, রেল স্টেশন, পোস্ট অফিস, তার ও যোগাযোগ বিভাগের কাজকর্ম অচল করে দিয়েছিল। গান্ধিজি পরিচালিত আর কোনো আন্দোলনে এত হিংসার প্রকাশ ঘটেনি। যুবক, ছাত্র ও কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল, মহিলারাও পিছিয়ে ছিল না। কোনো কোনো অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। তবে কমিউনিস্টরা জনযুদ্ধের নীতি অনুসরণ করায় শ্রমিক ধর্মঘটের সংখ্যা ছিল খুব কম। মুসলিম লিগ এই আন্দোলনে যোগ দেয়নি, তবুও যথেষ্ট উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। দুবছর পরে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট গান্ধিজি আন্দোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও আন্দোলন আরও কিছুকাল ধরে চলেছিল।
গান্ধিজি হিংসা না চাইলেও হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, জনগণ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। জওহরলাল নেহরু ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া-তে এই হিংসার বর্ণনা দিয়েছেন (The people forgot the lessons of non-violence)। জয়প্রকাশ নারায়ণ ও তাঁর অনুগামীরা সশস্ত্র আন্দোলনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। বাংলা, বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশে আন্দোলন চলেছিল। অনেক জায়গায় আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, জনগণই ছিল নেতা।
সতীনাথ ভাদুড়ির জাগরী উপন্যাসে সমকালীন মানসিকতার এরকম বর্ণনা আছে : ‘এক বৈদ্যুতিক শক্তি সহসা দেশ শুদ্ধ লোককে উদ্ভ্রান্ত ও দিশাহারা করিয়া দিয়াছে। যেখানে যাও মনে হইতেছে যেন পাগলাগারদের ফটক খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। বিক্ষুব্ধ অথচ নেশাগ্রস্ত জনতা কী করিবে ভাবিয়া উঠিতে পারিতেছে না। রেল স্টেশন, খাসমহল, কাছারি, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও থানার পর্ব শেষ হইয়া গিয়াছে।’ শহরাঞ্চলে হরতাল, স্কুল কলেজ বন, ধর্মঘট, বাস পোড়ানো, পুলিশ ও সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাত ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। স্টিফেন হেনিংহ্যাম মনে করেন অর্থনৈতিক কারণে নয়, পুলিশি অত্যাচার, উচ্চবর্ণের প্ররোচনা ও জাতীয় আবেগের জন্য কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। জয়প্রকাশ নারায়ণ ও রামনন্দন মিশ্রের মতো নেতারা যোগাযোগ নষ্ট করার নির্দেশ দেন। এরা বন্দি হলে ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, কংগ্রেস কর্মীরাও ছিলেন। তথাকথিত ছোটো জাতের লোকেরাও বাদ যায়নি, তারা হাটবাজার লুটের কাজে যোগ দিত।
গুজরাট ছিল কংগ্রেসের ‘আধ্যাত্মিক নিবাস, এখানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বল্লভভাই প্যাটেল। ডেভিড হার্ডিম্যান দেখিয়েছেন এখানে আন্দোলন কম নাটকীয় হলেও বেশিদিন স্থায়ী হয়েছিল, ছিল সুগঠিত, সুনিয়ন্ত্রিত। আমেদাবাদের সুতোকলে ধর্মঘট হয়, বোমাবাজি ও নাশকতামূলক কাজে পশ্চিম ভারত ছিল এগিয়ে। আমেদাবাদ, বরোদা ও সুরাট শহরে আন্দোলন হয়, শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও গ্রামের পতিদার কৃষকরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের সাতারায় গেরিলা কাজকর্ম চলেছিল, সেখানে বিদ্রোহীরা জাতীয় সরকার গঠন করে লড়াই করেছিল। এখানে স্বাধীনতা অর্জন একমাত্র লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল কৃষক-শ্রমিক রাষ্ট্রগঠন করা। এরা গান্ধির নির্দেশ অমান্য করে এবং ব্রিটিশ দমননীতি অগ্রাহ্য করে বিদ্রোহ চালিয়েছিল। এরা সহিংস আন্দোলন করলেও মনে করেছিল গান্ধিজির নীতি তারা অনুসরণ করে চলেছে। হাজার হাজার আন্দোলনকারী বন্দি হন, বহু লোক প্রাণ হারান। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মধ্যে পরিকল্পনার অভাব ছিল, নেতৃত্বেরও অভাব ছিল।
মূল্যায়ন
গান্ধিজিসহ প্রথম সারির সব নেতা বন্দি হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রায় ছিল না। অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন যে সঠিক সময়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করা হয়নি, আরও আগে শুরু করলে হয়তো এই আন্দোলন সফল হত। মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা, আম্বেদকরের হরিজন সম্প্রদায় ও কমিউনিস্টরা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। কমিউনিস্টদের জনযুদ্ধের জিগির, ভারত ছাড়ো সমর্থকদের পঞ্চমবাহিনী আখ্যা দান, শ্রমিকদের ধর্মঘট থেকে দূরে রাখা এবং দেশভাগের প্রস্তাব আন্দোলনের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই আন্দোলন থেকে মুসলিম লিগ লাভবান হয়েছিল। পাঞ্জাব ও বাংলায় তারা শক্তিবৃদ্ধি করেছিল, কংগ্রেস নেতারা বন্দি ছিলেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ঝড়, শস্যহানি ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে স্তিমিত করে দিয়েছিল। বাংলার ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ এবং ৩৫ লক্ষ লোকের প্রাণহানি এই আন্দোলনের ভাগ্যকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .