ভারতে দারিদ্র্যের পরিমাণ পরিমাপের জন্য বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ নানারূপ হিসাবের সাহায্যে তা করার চেষ্টা করেছেন। তারা সবাই দৈনিক ২২৫০ ক্যালােরিযুক্ত খাদ্যকেই নিম্নতম প্রয়ােজনীয় মান হিসাবে ধরেছেন।
ভারতে দারিদ্র্যের বিভিন্ন পরিমাপ
যে সমস্ত অর্থনীতিবিদ ভারতে দারিদ্র্যের পরিমাপ করেছেন তাঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য কয়েকজন হলেন –
ড. পি. ডি. ওঝা (P.D. Ojha)
ড. পি. ডি. ওঝা ১৯৬০-৬১ খ্রিস্টাব্দের দামে মাথাপিছু মাসিক ভােগ ব্যয় গ্রামাঞ্চলে ৮ টাকা থেকে ১১ টাকা এবং শহরাঞলে ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা ধরে দারিদ্র্যের হিসাব করেন। এই হিসাব অনুযায়ী ১৯৬০-৬১ খ্রিস্টাব্দে গ্রামাঞ্চলে ১৮.৪ কোটি মানুষ (৫১.৬ শতাংশ) এবং শহরাঞলে ৬০ লক্ষ মানুষ (৭.৬ শতাংশ) দারিদ্র্যসীমার নীচে ছিল। ১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে ওই সংখ্যা দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় গ্রামাঞ্চলে ২৮,৯ কোটি (৭০ শতাংশ)। সুতরাং ড. ওঝার হিসাব থেকে দেখা যায় যে, ১৯৬০-৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মােট দরিদ্র লােকের সংখ্যা ছিল ৪৪ শতাংশ এবং ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৭ – ৬৮ সালের মধ্যে গ্রামাঞলেই দারিদ্র্যের তীব্রতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ড. বি. এস. মিনহাস (Dr. B.S. Minhas)
অর্থনীতিবিদ মিনহাস মাথাপিছু মাসিক ২০ টাকা ভােগ ব্যয়কে দারিদ্র্যসীমা ধরে নিয়ে দেখান যে, ১৯৫৬-৫৭ সালে গ্রামাঞ্চলে মােট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ লােক ছিল দারিদ্র্যসীমার নীচে। ১৯৬৩-৬৪ সালে ভারতে মােট জনসংখ্যার মধ্যে ৫৭.৮ ছিল দরিদ্র (২২.১০ কোটি)। ১৯৬৯-৭০ সালে গ্রামের দরিদ্রের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মােট জনসংখ্যার ৫০.৬ শতাংশ (২১কোটি)। সুতরাং তার হিসাব অনুসারে ভারতে গ্রামীণ দারিদ্র্য ক্রমশ কমছে।
ড. প্রণব বর্ধন (Dr. P.K. Bardhan)
অধ্যাপক প্রণব বর্ধন মাসিক মাথাপিছু ১৫ টাকা ভােগ ব্যয়কে দারিদ্র্যসীমা ধরে দেখান যে, ১৯৬০-৬১ সালে ভারতের গ্রামাঞ্চলে মােট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নীচে। কিন্তু ১৯৬৭-৬৮ সালে ওই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩ শতাংশ -এ দাঁড়ায়। অর্থাৎ গ্রামাঞলে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী লােকের অনুপাত ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৭-৬৮ সালের মধ্যে বেড়ে গেছে।
ড. দা কোস্তা (Dr. De Costa)
অধ্যাপক কোস্তা জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (NSS) তথ্যের ভিত্তিতে দেখান যে, ১৯৬৩-৬৪ সালে ভারতের মােট জনসংখ্যার ৩৪.৫ শতাংশ (১৬.২০ কোটি) লােক দরিদ্র ছিল। এদের মধ্যে চরম দুঃস্থ মানুষ ছিল। ১৩.৯ শতাংশ (৬.২ কোটি)। কোস্তা গ্রামাণ্ডলে মাথাপিছু মাসিক ১৫ টাকা ও শহরাঞলে ২৪ টাকা ভােগ ব্যয়কে ভিত্তি করে দারিদ্র্যের এই পরিমাপ করেছেন।
ড. দাণ্ডেকর ও রথ (Dr. Dandekar and Rath)
ড. দাণ্ডেকর ও রথ ১৯৬০-৬১ সালের মূল্যস্তরে গ্রামাঞলে বছরে মাথাপিছু ১৮০ টাকা এবং শহরাঞ্চলে বছরে মাথাপিছু ২৭০ টাকা ব্যয়কে দারিদ্র রেখা ধরে দেখিয়েছেন যে, ১৯৬০-৬১ সালে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নীচে এবং শহরাঞ্চলের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নীচে। অন্যদিকে, দাণ্ডেকর পুনরায় ১৯৭০-৭১ সালের দামস্তরে ৩২.৭০ টাকা, ১৯৭৭-৭৮ সালের দামস্তরে ৫৪.৪০ টাকা এবং ১৯৮৩-৮৪ সালের দামস্তরে ৮৮.৪০ টাকা মাসিক মাথাপিছু ভােগ ব্যয়কে মাপকাঠি ধরে দেখান যে, ১৯৭০-৭১ সালে গ্রামাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২৩.৮০ কোটি (৪৬ শতাংশ), ১৯৭৭-৭৮ সালে ২৪.৪০ কোটি (৪৯.৫ শতাংশ) এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে ছিল ২৮.৬০ কোটি (৪৪.৪১ শতাংশ)।
Read More
- ডাঙ্গেল খসড়া কী ?
- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) দুটি কাজ উল্লেখ করাে।
- গ্যাট ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায় ?
- বিমা কয় প্রকার ও কী কী ?
- দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কাকে বলে?
- দারিদ্র্যের ফাকঁ কাকে বলে?
- বেসরকারি কেন্দ্রায়ন বলতে কী বােঝাে?
- মরসুমি বেকারত্ব কাকে বলে?
- সংঘাতজনিত বেকারত্ব বা বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব কাকে বলে?
- ভারতে দারিদ্র্য টিকে থাকার কারণগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করাে।
- ভারতের মতাে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্বের ধরনগুলি উল্লেখ করাে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .