বৈপরীত্য উত্তাপ
বৈপরীত্য উত্তাপ কাকে বলে? সাধারণ নিয়ম অনুসারে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে। কিন্তু কখনও কখনও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস না পেয়ে বরং বেড়ে যায়, একে বায়ুমণ্ডলের বৈপরীত্য উত্তাপ বলে। এই ব্যতিক্রম সাধারণত পার্বত্য উপত্যকার শান্ত আবহাওয়ায় দেখতে পাওয়া যায়।
বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ
(১) ঠাণ্ডা বায়ু গরম বায়ুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী। তাই শীতকালে ‘U’ আকৃতির পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের বাতাস রাত্রি বেলায় তাপ বিকিরণের ফলে খুব ঠাণ্ডা ও ভারী হয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ঐ বাতাস (যা ‘ক্যাটাবেটিক’ বায়ু নামে পরিচিত) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নীচে নেমে এসে উপত্যকার নীচের অংশ দখল করে।
ফলে পার্বত্য উপত্যকার নীচের অংশ বেশি ঠাণ্ডা হয় এবং নীচের গরম ও হাল্কা বাতাস ওপরে ওঠে এর ফলে উপত্যকার নীচের অংশের তুলনায় ওপরের অংশে বায়ুর তাপমাত্রা বেশি হয়।
(২) বায়ুর চেয়ে কঠিন ভূ-পৃষ্ঠের আপেক্ষিক তাপ কম এবং বিকিরণের হার বেশি হওয়ায় শীতকালের দীর্ঘ রাত্রিতে প্রচুর তাপ বিকিরণ করে নিকটবর্তী বায়ুমণ্ডলের চেয়ে ভূ-পৃষ্ঠ বেশি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে। তাই শীতল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠতে থাকলে প্রথমেই আমরা পাই সব থেকে নীচের ঠাণ্ডা বায়ুস্তর, আরও ওপরে উঠলে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বায়ুস্তর। শীতের শেষ রাত্রে কোনো উঁচু মিনারে উঠলে এটা অনুভব করা যায়। শীতকালে এই জন্য ধোঁয়া সোজা ওপরে না উঠে ভূমির সমান্তরালে প্রবাহিত হতে থাকে।
(৩) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সমতল স্থানগুলোতে পরিষ্কার আবহাওয়ায় প্রধানত রাত্রিবেলা উষ্ণতার এই বিপরীত অবস্থা দেখা যায় এবং তা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী থাকে। আবার শীতকালে প্রতীপ ঘূর্ণবাত প্রবণ অঞ্চলে বেশি উষ্ণতাতেও বৈপরীত্য উত্তাপ দেখা যায়।
■ বৈপরীত্য উত্তাপের উদাহরণ
কোনো শৈলাবাসে (যেমন দার্জিলিং-এ) গেলে বৈপরীত্য উত্তাপ ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝা যায়। ভোরবেলায় এখানে বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য উপত্যকাগুলি মেঘে ঢাকা থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে উপত্যকাগুলি মেঘমুক্ত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .