বারিমণ্ডলের পরিবেশগত গুরুত্ব
পার্থিব পরিবেশের সঙ্গে বারিমণ্ডল ওতপ্রােতভাবে জড়িত। বারিমণ্ডল প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণাগার। বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বারিমণ্ডলের তাৎপর্য অসীম। কারণ –
(১) বারিমণ্ডল ছাড়া জলচক্র (hydrologic cycle) অসম্পূর্ণ। জলসম্পদ সৃষ্টির জন্য জলচক্র অপরিহার্য। বারিমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে জলের জোগান থাকবে না।
(২) বারিমণ্ডল ব্যতীত বাস্তুতন্ত্র (eco-system) অসম্পূর্ণ। সমুদ্র হল পৃথিবীর বৃহত্তম বাস্তুতান্ত্রিক একক।
(৩) বারিমণ্ডল জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ধারক ও বাহক।
(৪) বারিমণ্ডল প্রােটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের উৎস, যেমন- মাছ, চিংড়ি, কাকড়া, ক্রিল (kril), ফার্ন (fern) প্রভৃতি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে বারিমণ্ডল থেকে আহৃত খাদ্য মানুষের চিরাচরিত খাদ্যের সুষম বিকল্প হবে।
(৫) বারিমণ্ডল বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য ও জ্বালানি সম্ভারে সমৃদ্ধ। ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, তামা, কোবাল্ট, ফসফেট, ক্যালশিয়াম সালফেট, স্ট্রনসিয়াম সালফেট ইত্যাদি খনিজ পদার্থ সমুদ্রের মহীসােপান অঞ্চল (continental shelf) বা অন্যান্য অগভীর অংশ থেকে আহরণ করা যায়। এ ছাড়া, খনিজ তৈল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জ্বালানি প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক ক্ষেত্রগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
(৬) অর্থনৈতিক ভিত্তিতে মাছ ধরা (fishing), তিমি শিকার (whaling), কৃত্রিম মুক্তোর চাষ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেমন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযােগ আছে, তেমনি বিপুল পরিমাণ অর্থ এই উদ্যোগগুলির জন্য লগ্নী করা হয়। জৈব সার (organic manure) উৎপাদনের জন্য ও পশুখাদ্য প্রস্তুত করার কাজে সামুদ্রিক মাছ কাজে লাগে।
(৭) বারিমণ্ডল পানীয় জল ও সেচের জলের জোগান দেয়। প্রসঙ্গত, সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে সুপেয় পানীয় জল উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ভারতের চেন্নাই শহরে সমুদ্রজল থেকে প্রস্তুত করা পানীয় জল সরবরাহ করা হয়।
(৮) নদী, সমুদ্র, হ্রদে চিরাচরিত ও সুলভ জলপরিবহণ ব্যবস্থার উৎস হল বারিমণ্ডল।
(৯) সমুদ্রস্রোত, জোয়ার-ভাটা ও নদীর বহমান জলধারা জলবিদ্যুতের উৎস। এছাড়া সমুদ্রজলের হাইড্রোজেন থেকে জ্বালানি উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার যেভাবে দ্রুত নিঃশেষিত হয়ে চলেছে সেই প্রেক্ষিতে বারিমণ্ডল ভবিষ্যতে জ্বালানি সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নেবে। কারণ বারিমণ্ডল পুনর্ভব (renewable) শক্তির (energy) আধার।
(১০) বারিমণ্ডল দূষণ প্রতিরােধে সাহায্য করে। যেমন, কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) ইত্যাদি দুষিত গ্যাসগুলি সমুদ্রজলে মিশে যায়। তাই, জলাভূমি, সাগর, মহাসাগরকে কার্বন সিঙ্ক (Carbon sink) বলে। পৃথিবীর প্রায় ৯৩% কার্বন ডাইঅক্সাইড সমুদ্রজলে মিশে রয়েছে। এছাড়া সমুদ্র হল বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন-এর সবচেয়ে বড় উৎস।
Read More
- বায়ােম (Bioine) কাকে বলে?
- প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট কাকে বলে?
- “নিচ” (Niche) বা “নিসে” বলতে কী বােঝায়?
- জলচক্র বা বারিচক্র কাকে বলে? পরিবেশ জলচক্রের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো।
- অলবণীকরণ বা ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট (Desalination Plant) কী? এই পদ্ধতির অসুবিধা কী?
- জীবমণ্ডল কাকে বলে ? জীবমণ্ডলের পরিবেশগত গুরুত্ব কী ?
- বারিমণ্ডল বা হাইড্রোস্ফিয়ার কাকে বলে? এর উপাদানগুলি কী কী?
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .