প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক
১৮১৩ খ্রিঃ সনদ আইনের ৪৩নং ধারায় ভারতে শিক্ষা প্রসারের জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে কোম্পানীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এই অর্থ প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন্ শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে আইনের ধারায় অস্পষ্টতা ছিল। ফলে এ নিয়ে বিতর্ক ওঠে এবং ১৮১৩ থেকে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এক লক্ষ টাকার এক পয়সাও ব্যয় হয়নি। ১৮২৩ খ্রিঃ পাবলিক ইন্সট্রাকশন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলা হয়। এই কমিটি প্রাচ্য শিক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে রামমােহন প্রবল আপত্তি জানান। কমিটির সদস্যদের মধ্যে দেয় মতভেদ, যা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক’ নামে পরিচিত।
বিতর্ক
কমিটির সদস্যদের একদল মনে করেন, প্রাচীন ভারতীয় ভাষা, সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদান করা উচিত। এই মতের সমর্থক ছিলেন বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ এইচ.টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলবান। এঁরা প্রাচ্যবাদী বা এরিয়েন্টলিস্ট নামে পরিচিত হন। অপরদিকে আলেকজাণ্ডার ডাফ, কেলভিন, স্যাণ্ডার্স প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থক ছিলেন। এঁরা পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলােসিস্ট নামে পরিচিত হন।
বিতর্কের অবসান
অবশেষে গভর্ণর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন পরিষদের সচিব টমাস ব্যারিংটন মেকলেকে এই কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করে এই সমস্যা সমাধানের ভার দেন। মেকলে পাশ্চাত্যবাদীদের যুক্তিকে সমর্থন করে বেন্টিঙ্কের কাছে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের জন্য সুপারিশ করেন। শেষ পর্যন্ত লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক মেকলের সুপারিশ মেনে ভারতে সরকারি উদ্যোগে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের নির্দেশ দেন। এভাবে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসান ঘটে এবং ভারতে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তার শুরু হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .