পিটের ভারত শাসন আইন
১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম পিট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর ত্রুটিগুলাে দূর করার উদ্দেশ্যে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের একটি বিল পার্লামেন্টে নিয়ে এসেছিলেন। এই বিলটি ছিল ভারত শাসন সম্পর্কিত বিল। উইলিয়াম পিটের নামানুসারে এই আইনটির নাম হয় পিটের ভারত শাসন আইন।
পিটের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানির শাসনের নতুন গঠনতন্ত্র রচিত হয়। এই আইনের ধারা অনুসারে —
১) ব্রিটিশ অর্থ সচিব, একজন রাষ্ট্র সচিব ও রাজা কর্তৃক মনােনীত চারজন প্রিভি কাউন্সিলারদের নিয়ে গঠিত বাের্ড অফ কন্ট্রোল নামক পর্ষদের হাতে কোম্পানির সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়।
২) বােম্বাই সরকারের উপর ও মাদ্রাজ সরকারের ওপর বাংলার কর্তৃত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়।
৩) পিটের ভারত শাসন আইনে একথা ঘােষণা করা হল যে, রাজ্য জয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ইংল্যান্ডের জাতীয় মর্যাদা ও নীতির পরিপন্থী। পিটের ভারত শাসন আইন ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহাল ছিল। এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে কোম্পানির সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাতে প্রদত্ত করা হয়।
তবে পিট কোম্পানির স্বার্থের দিকটিও দেখেছিলেন। কোম্পানির কর্মচারী নিয়ােগ ও বরখাস্ত করার ব্যাপারে কোনাে আইন করা হয়নি। অথচ কোম্পানির কাজের লাগাম টানার জন্য বাের্ড অফ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা হয়েছিল।
পিটের ভারত শাসন আইন ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিল না। বাের্ড অফ কন্ট্রোল ও পরিচালক সভার দ্বৈত শাসনের ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যই ভারত সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। তাছাড়া পিটের ভারত শাসন আইন সর্বদা মান্য করা হয়নি। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ। যেক্ষেত্রে লর্ড কর্নওয়ালিশ এই আইনকে অমান্য করে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ইলবার্টের মতে ভারত শাসন আইন ছিল জটিল। তবে এডমন্ড বার্ক মনে করেন যে, এই আইন ছিল অত্যন্ত সময়ােপযােগী ও বাস্তববাচিত। এই আইন সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .