পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে জলবায়ু , জীবমণ্ডল , ভূপ্রকৃতি , আদিশিলা প্রভৃতির তারতম্যে বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকার এই শ্রেণিবিভাগ ছকের মাধ্যমে দেখানো হল —
পার্বত্য অঞ্চলের মাটি
অবস্থান : পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল অর্থাৎ দার্জিলিং , কালিম্পং , আলিপুয়ারদুয়ার প্রভৃতি জেলায় এই মাটি দেখতে পাওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য
- এই মৃত্তিকার গভীরতা খুব কম।
- প্রধানত নিস শিলা থেকে সৃষ্ট এই মৃত্তিকা কিছুটা আম্লিক প্রকৃতির এবং এটি পডসল মাটি।
- এর রং প্রধানত ধূসর বাদামি।
- এই মৃত্তিকায় বেশি পরিমাণে নুড়ি , পাথর কাঁকর প্রভৃতি থাকে।
- এতে যথেষ্ট পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে।
- ভূমির ঢাল বেশি এবং বৃষ্টিবহুল অঞ্চল বলে এখানে মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা খুব বেশি।
উৎপন্ন ফসল
এই মৃত্তিকায় চা , কমলালেবু , সিঙ্কোনা প্রভৃতি উৎপাদিত হয় ।
তরাই অঞ্চলের মাটি
অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদনদী হিমালয় ক্ষয়িত পদার্থসমূহ বহন করে এনে এখানে সঞ্চয় করার ফলে তরাই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে।
- এই মাটিতে নুড়ি , কাঁকর , বালি প্রভৃতির পরিমাণ বেশি।
- গভীর বনভূমির জন্য মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকে।
- মাটির গভীরতা মধ্যম প্রকৃতির এবং
- এর রং ধূসর থেকে কালো।
- মাটির উর্বরতা মধ্যম প্রকৃতির।
উৎপন্ন ফসল
এই মাটিতে ধান , গম , চা , আলু প্রভৃতি চাষ করা হয় ।
মালভূমি অঞ্চলের মাটি
অবস্থান
পুরুলিয়া , বাঁকুড়া , বীরভূম , বর্ধমান , পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মালভূমি অঞ্চলে এবং মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্য
- এখানে প্রধানত দুই ধরনের মাটি দেখা যায়— পশ্চিমভাগে ল্যাটেরাইট মাটি এবং পূর্বভাগে লাল মাটি।
- ল্যাটেরাইট মাটি দেখতে অনেকটা ইটভাঙা সুরকির মতো। এতে লোহার ভাগ বেশি থাকে। তবে এই মাটি অনুর্বর। সেচের সুবিধা থাকলে এই মাটিতে চাষাবাদ করা যায়।
- এই অঞ্চলের পূর্বভাগে আছে ল্যাটেরাইট ক্ষয়িত লাল মাটি। এই মাটির কণাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয় । মাটিতে লোহার ভাগ বেশি থাকে বলে এই মৃত্তিকার রং লাল।
- এই মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা কম । তাই জলসেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা হয়।
উৎপন্ন ফসল
এই মাটিতে ধান , গম , ভুট্টা , আলু প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয় ।
সমভূমি অঞ্চলের মাটি
অবস্থান
জলপাইগুড়ি , কোচবিহার , উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর , মুরশিদাবাদ , নদিয়া , উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা , হাওড়া , হুগলি , পূর্ব মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় এই মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- এই মাটির গভীরতা খুব বেশি।
- মাটি কিছুটা আম্লিক প্রকৃতির।
- মাটির মধ্যে বালি ও পলির পরিমাণ বেশি থাকে।
- বয়স অনুসারে এই মাটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়— প্রাচীন পলিমাটি ও নবীন পলিমাটি
- প্রাচীন পলিমাটির রং লালচে বা হালকা লাল এবং নবীন পলিমাটি প্রধানত ধূসর রঙের।
- প্রাচীন পলিমাটির তুলনায় নবীন পলিমাটি বেশি উর্বর হয়।
উৎপন্ন ফসল
ধান , গম , পাট , আখ প্রভৃতি পলিমাটিতে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য ফসল।
উপকূলের লবণাক্ত মাটি
অবস্থান
সুন্দরবন ও কাঁথি উপকূলে প্রধানত এই মাটি লক্ষ করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য
- এই মাটির গভীরতা খুব বেশি।
- মাটির কণাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়।
- মাটিতে লবণের পরিমাণ খুব বেশি থাকে।
- এই মাটিতে জোয়ারভাটার প্রভাব বেশি বলে মাটি আর্দ্র ও লবণাক্ত প্রকৃতির হয়।
- মাটির রং কালচে প্রকৃতির।
উৎপন্ন ফসল
বৃষ্টির জলের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে মাটির লবণতা হ্রাস করে নারকেল , সুপারি , ধান , তরমুজ , লঙ্কা , শাকসবজি প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়।
Read More
- পশ্চিমবঙ্গের কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
- বায়ুর উষ্ণতা ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
- বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণগুলি উল্লেখ করো।
- পৃথিবীর প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির চিত্রসহ আলোচনা করো।
- বায়ুমণ্ডলের উপাদান হিসেবে ধূলিকণা ও জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।
- পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব লেখো।
- পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্য সমূহের বিবরণ দাও।
- অঙ্গরাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব আলোচনা করো।
- পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ এর পরিচয় দাও।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .