পশ্চিমবঙ্গের ঋতুচক্র
উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিস্তার এবং ভূমিরূপের নানা বৈচিত্র্য এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারতম্য ঘটিয়েছে। এই রাজ্যের দক্ষিণ দিক থেকে যতই উত্তর দিকে যাওয়া যায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ততই বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে।
উত্তরে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু সাধারণভাবে উষ্ণ ও আর্দ্র এবং ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত। জলবায়ু অঞ্চল হিসাবে, পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্ম প্রধান উষ্ণ মৌসুমি অঞ্চলের অন্তর্গত।
জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের বছরের বিভিন্ন সময়ে তারতম্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে কয়েকটি ঋতুতে ভাগ করা হয়, যেমন : (১) শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, (২) আর্দ্র বর্ষাকাল, (৩) শরৎকাল ও (8) শীতকাল, এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্পস্থায়ী। তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। বছরের বিভিন্ন সময়ে জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে কয়েকটি ঋতুতে ভাগ করা যায়, যথা :-
শুষ্ক গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে)
পশ্চিমবঙ্গে ঋতু মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মার্চ মাস থেকে বায়ু মণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং মে মাসে সর্বোচ্চ হয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের গড় উত্তাপ ২০°–৩০° সেলসিয়াস থাকলেও, দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানে তা ৪০° – ৫০° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। তবে পর্বতের উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এই সময় দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা ১৪°–১৭° সেলসিয়াসে পৌঁছোয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গে সমভূমি অঞ্চলে কালবৈশাখীর ঝড় হয়।
আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমন কাল বা বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)
পশ্চিমবঙ্গে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই সময় প্রায় ১২৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-এ সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত (৪০০ সেমি) এবং পুরুলিয়া জেলায় সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত (প্রায় ১০০ সেমি) হয়। এই সময় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিক থেকে যতই দক্ষিণ দিকে যাওয়া যায়, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ততই কমতে থাকে।
শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস)
শরৎকালে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বর এই দু’মাসে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা (২০° – ২৫° সেলসিয়াস) দুইই কমে আসে। এই সময়টা তাই খুবই আরামদায়ক, তবে এই সময় হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে।
শুষ্ক শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারি)
শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত শীতল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র তাপমাত্রা কমে গিয়ে ১৫° সেলসিয়াস বা তার চেয়েও কম হয়। এই সময় উত্তরের দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম হয় এবং ওই শহরে উত্তর-পশ্চিমের উঁচু পর্বতশৃঙ্গগুলোতে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়।
● এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্পস্থায়ী। তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোনো প্রভাব নেই।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .