ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার দ্রুত সম্প্রসারণের পথে নানা সমস্যা বিদ্যমান। রাধাকৃষ্ণন কমিশন, মুদলিয়র কমিশন, জাতীয় কমিটির রিপাের্ট, শ্রীমতী দূর্গাবাই দেশমুখের নেতৃত্বে জাতীয় নারী শিক্ষা পরিষদ স্থাপন, শ্রীমতী হংস মেহেতা কমিটির রিপাের্ট এবং শ্রীভক্ত বৎসলসম কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও সর্ব ভারতীয় ভিত্তিতে নারী শিক্ষার আশানুরূপ সম্প্রসারণ সম্ভব হয়নি। সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি নানা সমস্যা বাধার বিন্ধাচল হিসাবে বিদ্যামান। সমস্যাগুলি নিম্মে বর্ণিত হল
নারীশিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা
(১) গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা প্রকার কুসংস্কার এখনও বিদ্যামান। প্রয়ােজন অনুসারে আঞ্চলিক দূরত্ব বিচার করে মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয় না থাকায় মেয়েদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে তারা পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
(২) অনেক গ্রাম আছে যেখানে আজও মেয়েদের জন্য পৃথক মাধ্যমিক স্কুল গড়ে ওঠেনি।
(৩) সামাজিক অবস্থা নারী শিক্ষা বিস্তারের একটি অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক।
(৪) অর্থনৈতিক দুরবস্থা নারী শিক্ষা বিস্তারের প্রতিবন্ধক। পিতামাতার আর্থিক সঙ্গতি ভালাে না থাকার জন্য দরিদ্র পরিবারে এখনও পণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে থাকে।
(৫) সামাজিক রক্ষণশীলতা নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এই রক্ষণশীলতা বিশেষ করে মুসলিম, অনগ্রসর ও উপজাতিদের মধ্যে আরাে গভীর।
(৬) বাল্য বিবাহ নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের আর একটি অন্যতম প্রতিবন্ধক। বিবাহের নিম্নতম বয়স সম্পর্কে আইন থাকলেও দরিদ্র পরিবারে বাল্যবিবাহ এখনও প্রচলিত।
(৭) দরিদ্র নিরক্ষর মায়েরা নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের পথে অন্যতম অন্তরায় স্বরূপ। নিরক্ষর মায়েরা পড়াশুনার বদলে সন্তানদের ঘরকন্নার কাজে বা অন্য পরিবারে চাকরানির কাজ বেশী পছন্দ করে। মায়ের নিরক্ষরতা ছেলেমেয়েদের সাক্ষরতাকে ব্যাহত করেছে।
(৮) গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট দুর্গম, কর্দমাক্ত। স্কুলে যাতায়াতের পক্ষে অসুবিধাজনক। যানবাহনের অসুবিধা নারীশিক্ষা প্রসারের একটি অন্যতম বাধা।
(৯) বিয়ে হবার পর শ্বশুরবাড়িতে ঘরকন্নার কাজ করার পর স্কুলে কলেজে পড়া অনেক মেয়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মা হবার পর শিশু ছেলেমেয়েকে ছেড়ে স্কুলে কলেজে পড়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার।
(১০) এখনও পর্যন্ত মেয়েদের ভিড় মানবিক শাখায়, (Humanities), তাই শিক্ষিত মহিলাদের বেকারত্ব ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। এখনও নারীশিক্ষা কর্মমুখীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ নয়।
(১১) কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রেও সংকুচিত। ম্যাট্রিক/মাধ্যমিক পাশ করে সংসারে বধূ হিসাবে রয়েছেন বর্তমানে ভারতে প্রায় দশ লক্ষাধিক মহিলা।
(১২) হস্তশিল্প ছাড়া অন্যান্য বৃত্তি শিক্ষার সুযােগ মেয়েদের কাছে আজও সামান্য।
(১৩) নারী শিক্ষার একটি বড় সমস্যা হল শােচনীয় অপচয় (Westage) ও অনুন্নয়ন (stagnation)। যারা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয় তাদের শতকরা মাত্র ৪০ জন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া চালিয়ে যায়, ফলে বাকী ৬০ জনের সময়, শ্রম ও অর্থ নিয়ােগ ব্যর্থ হয়।
(১৪) গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেক অভিভাবক/অভিভাবিকা নারী শিক্ষা সম্পর্কে ততটা সজাগ নন। পাঠশালায় পাঠাবার চেয়ে ঘরের কাজে লাগানাে বেশী দরকার মনে করে। গ্রাম অপেক্ষা শহরে মেয়েদের সুযােগ সুবিধা বেশী। অভিভাবকরা শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে বিশেষ অবহিত।
Read More
- ব্রহ্মবাদিনী ও সদ্যোবাদ বলা হত?
- স্ত্রীধন বলতে কী বােঝ?
- কন্ঠী ও কল্পী কী?
- শক্তিনী কাদের বলা হত?
- মিস মেরি কার্পেন্টর কে ছিলেন?
- উডের ডেসপ্যাচ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- পণ্ডিতা রামাবাঈ কে?
- বেগম রােকেয়া শাখাওয়াত কে ছিলেন?
- মাতাজী মহারানি তপস্বিনী কে ছিলেন?
- ভগিনী সুব্বালক্ষ্মী কে ছিলেন?
- সারদা সদন কে, কী উদ্দেশ্য স্থাপন করেন?
- নারী শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায়গুলি কী কী ?
- নারীশিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান উল্লেখ করাে।
- নারীশিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখাে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .