Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বর্ণনা দাও।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন

রামমােহন যখন একদিকে রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কার এবং অন্যদিকে খ্রিস্টান মিশনারিদের আক্রমণের হাত থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার জন্য তার যুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, মােটামুটি সেই সময় ডিরােজিওর নেতৃত্বে কিছু আদর্শবাদী যুবক হিন্দুধর্ম ও সমাজের ওপর পুরােপুরি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুকরণ করে এক ধরনের চরমপন্থী মতাদর্শ অনুসরণ করার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। তারুণ্যের তেজে উদ্দীপ্ত এবং ভাবাবেগে আপ্লুত এক বিধ্বংসী আন্দোলন হিন্দুধর্ম ও সমাজের ভিত্তি কাপিয়ে দেয়, এই আন্দোলনই ইতিহাসে “নব্যবঙ্গ আন্দোলন” নামে পরিচিত।

হিন্দু কলেজের ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক হেনরি ভিভিয়ান ডিরােজিও নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়ের গুরু বলে পরিগণিত হন। তিনি তাঁর অনুগামীদের যুক্তিবাদের আলােকে দীক্ষিত করেন। নব্যবঙ্গের সদস্য হিসাবে রসিকৃয় মল্লিক, কৃয়মমাহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, রামগােপাল ঘােষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারিচাঁদ মিত্র প্রমুখ উল্লেখযােগ্য। টমাস পেনের ‘Age of Reason তাঁর অনুগামীদের কাছে ছিল বাইবেলের মতাে। নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর ‘পার্থেনন’ পত্রিকায় সামাজিক কুসংস্কারের তীব্র নিন্দা করা হয়। এনকোয়র’ পত্রিকায় ও হিন্দুসমাজের গোঁড়ামির বিষয়টিকে সমালােচনা করা হয়।

ক্রমেই ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠী রক্ষণশীলতাকে হাতেকলমে আক্রমণের নীতি নেন। তাঁরা হিন্দু ধর্মের অস্পৃশ্যতা, পৌত্তলিকতা প্রভৃতির বিরােধিতা করেছিলেন। তারা খাদ্যের ব্যাপারে ছােয়াছুয়ি যে যুক্তিহীন তা প্রমাণ করার জন্য গােমাংস ভক্ষণ করেন ও উপবীত ত্যাগ করেন। অনেকে কালিঘাটের মা কালিকে Good Morning Madam’ বলে সম্বােধন করেন। তাঁদের এই বাড়াবাড়ির ফলে হিন্দু সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্ষণশীল হিন্দুদের চাপে ডিরােজিওকে পদচ্যুত হতে হয় এবং এর অল্পকাল পরে ওই মনীষী অধ্যাপক কলেরা রােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ডিরােজিও হিন্দু কলেজ ত্যাগ করলেও তিনি সমালােচনার যে আলাে জ্বেলে দেন তা অব্যাহত থাকে। ইয়ং বেঙ্গল দল দেখিয়ে দেয় কতকগুলি অসার, পচনশীল। প্রথাকে অনুসরণ করে হিন্দুসমাজ কীভাবে অবক্ষয়ের পথে চলেছে। তার ফলে হিন্দুসমাজে সংস্কার সম্পর্কে চেতনা দেখা দেয়।

দুঃখের বিষয় তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ গঠনমূলক ও সৃষ্টিধর্মী কোনাে সংস্কারের চেয়ে চমকসৃষ্টির প্রবণতা ছিল প্রকট। জনমানসে তারা ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন, ফলে ভক্তি ও শ্রদ্ধার আসন তারা পাননি। সৃষ্টির চাইতে ধ্বংসের দিকে বেশি দৃষ্টি ছিল বলে জনগণের সমর্থন ও সহানুভূতি তাঁরা পাননি। ডেভিড কফ ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠীর সমালােচনা করে বলেন, নব্যবঙ্গ আন্দোলন আদর্শের সংকটে জর্জরিত ছিল। নব্যবঙ্গ আন্দোলন ‘এলিটিস্ট’ সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাই নব্যবঙ্গ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল।

Comments ( 2 )

  1. এতো সুন্দর একটা গোছানো লেখা। অনেক উপকৃত হলাম।

  2. খুব ভালো হয়েছে

Leave a reply