নবপলীয় সভ্যতা
নবোপলীয় যুগে মানুষের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। এই যুগেই মানুষ প্রথম ভূমিকৰ্ষণ, পশুপালন, বয়ন ও স্থায়ী বসবাসের দ্বারা প্রথমে গ্রাম ও পরে নগরের সৃষ্টি করে। এছাড়াও নবোপলীয় যুগের মানুষরা নানা বৃত্তি ও পেশার সৃষ্টি করে। এই সময়ই তামা এবং ব্রোঞ্জের ব্যবহার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
ভূমিকৰ্ষণই ছিল নবোপলীয় যুগের “কৃষ্টির বুনিয়াদ”। ঠিক কিভাবে ভূমিকর্ষণের সূত্রপাত হয়েছিল তা আমরা জানি না। তব নিশ্চিতভাবে যেটা বলতে পারি যে ভূমিকর্ষণ প্রথম মেয়েদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। প্রত্নপোলীয় যুগের মানুষ ছিল যাযাবর। তাই তারা পশু শিকারে জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেত। প্রথম দিকে সে নিজ বাসস্থান থেকে বেশি দূরে যেত না কিন্তু অন্তিম প্রত্নোপলীও ও মেসোলিখিক যুগে ও তুষারযুগের পশ্চাৎ প্রসারনের সঙ্গে মানুষ শিকার অভিযানের পরিধি ক্রমশ প্রসার করতে শুরু করে। এই সময় পুরুষ প্রায়ই নিজেদের ডেরাতে ফিরতে দেরী হত। তখন মেয়েরা ক্ষুধার তাঁরনায় গাছের ফল এবং বন্য অবস্থায় উৎপন্ন খাদ্যশস্য খেয়ে প্রাণধারণ করত তারপর তাদের ভাবনা চিন্তায় স্থান পেল এক কল্পনা। সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া তাদের জানাই ছিল যেহেতু ভূমি বন্য অবস্থায় শস্য উৎপাদন করে সেহেতু তারা ভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে নিল। যুক্তির আশ্রয় নিয়ে তারা ভাবতে থাকল পুরুষ যদি নারী রূপে ভূমিকর্ষণ করে সন্তান উৎপাদন করতে পারে, তবে মাতৃরূপী পৃথিবীকে কর্ষণ করে শস্য উৎপাদন করা যাবে না কেন? তখন তারা পুরুষের লিঙ্গ স্বরূপ একটি লাঠি বানিয়ে ভূমি কর্ষণ করতে থাকে। মেয়েরা এইভাবে শস্য উৎপাদন করল। যখন ফসলে মাঠ ভরে গেল, তখন পুরুষ তা দেখে অবাক হল। তখন তারাও কৃষিকার্যে মেয়েদের সহায়ক হয়ে দাঁড়ালো।
যে কৃষ্টিপুঞ্জ (Culture complex) নবোপলীয় যুগের “কৃষ্টি মন্ডল” তৈরি করেছিল তা প্রধানত কৃষিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। কৃষিকর্মে বীজবপন থেকে শুরু করে ফসল তোলা, ঝাড়াই-মারাই প্রণালী সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। সেই কারণেই মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। তার ফলেই প্রথমে নিবির গ্রাম, ধীরে ধীরে হরপ্পা, পরে মহেঞ্জোদারোর মতো নগরের সৃষ্টি হয়েছিল। খুব সম্ভবত এই যুগের মানুষ প্রথম ঘরবাড়ি তৈরি করে মাটি দিয়ে এবং ঘরের ছাঁদ খড় দিয়ে ঢাকা হয়। গরু, বাছুর, হরিন এসে তাদের ফসল খেয়ে যায়, সেই কারণেই প্রহরার জন্য প্রথম তারা কুকুর পালন করতে শুরু করে। কৃষির জন্য জলের প্রয়োজন। সেইজন্য তারা জলসেচের ব্যবস্থা করল, কাস্তে উদ্ভাবন করল। মাঠ থেকে কাটা ফসল ঘরে আনতে গাধা পালন করতে শুরু করল। ফসল ঝাড়াই মারাই করার জন্য কুলো ব্যবহার করল। আবার সংরক্ষিত ফসল ও বীজ যাতে পোকায় নষ্ট না করে, তার জন্য মাটির পাত্র তৈরি করল। শস্য পেশাই-এর জন্য জাতা এবং ঢেকি তৈরি করল। প্রথম যুগে মাটির পাত্রগুলি হাতেই তৈরি হত। পরের যুগে চাকার সাহায্যে তা নিপুনতা পেল। খাদ্যশস্যর সাথে সাথে তাঁরা তুলোর চাষ এবং তুলার সুতো তৈরি করে কাপড় বয়ন করতে শুরু করে। মাছ ধরার জন্য বড়শি তৈরি করে। নদীতে পরিবহনের জন্য প্রথমে ভেলা ও পরে পুরো একটি গাছকে কুদে নৌকা তৈরি করে। এইভাবে একের পর এক জিনিস সৃষ্টি করে “নবোপলীয়” যুগের মানুষরা।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .