ধর্মপালের কৃতিত্ব
পালবংশীয় শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধর্মপাল। রাজত্বকাল ৭৭০-৮১০ খ্রীঃ। ধর্মপাল বাংলার পাল রাজ্যকে একটি সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেছিল। তিনি কনৌজের রাজা ইন্দ্রায়ুধকে পরাজিত করে তার অনুগত চক্রায়ধকে কনৌজের সিংহাসনে বসান। চক্রায়ুধের অভিষেককালে ‘ভোজ’ ‘মৎস’ ‘মদ্রা’ জনপদের রাজারা উপস্থিত ছিলেন। এই বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের রাজারা একটি সামন্তরাজার অভিষেক উপস্থিত থাকায় মনে হয় যে ওই রাজ্যগুলি কোন না কোন ভাবে রাজার ধর্মপালের প্রতি অনুগত ছিলেন। কুচবিহার সেসময় সম্পূর্ণভাবে পালে রাজাদের অধিকারে ছিল। ধর্মপালের সার্বভৌম অধিকার প্রচন্ড আঘাত আনেন প্রতিহর রাজ ২য় নাগভট্ট। তিনি ধর্মপালের অনুগত রাজা চক্রায়ুধকে যুদ্ধে পরাজিত ও বিতারিত করে কনৌজ জয় করেন। তারপর ধর্মপাল কনৌজ অধিকার করতে গেলে বর্তমানে মুঙ্গেরের নিকটবর্তী কোন এক স্থানে যুদ্ধে পরাজিত হন কিন্তু এই অবস্থায় রাষ্টকূট রাজা গোবিন্দ প্রতিহার রাজ্য আক্রমণ করলে হয় নাগভট্ট নিজ রাজ্য উদ্ধারের জন্য কনৌজ পরিত্যাগ করেন। এমত অবস্থায় ধর্মপাল অতিসহজেই কনৌজ অধিকার করেন। অন্যদিকে ৩য় গোবিন্দ নাগভট্টকে পরাজিত করে কনৌজ অধিকারে অগ্রসর হন। সুকৌশলি ধর্মপাল কোন যুদ্ধে না গিয়ে ২য় গোবিন্দের আনুগত্য স্বিকার করেন এবং ৩য় গোবিন্দের কন্যার সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করেন। এই সংগ্রামকে ত্রিসংগ্রাম বলে পরিচিত। (ত্রিশক্তি সংগ্রাম)
অচিরেই ৩য় গোবিন্দ নিজ দেশে ফিরে গেলে ধর্মপাল কনৌজের একছত্র অধিপতি হন। তবে এই সুখ তার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ পুনরায় প্রতিহার রাজ কনৌজ অভিমুখে অগ্রসর হন এবং পুনরায় ত্রিশক্তি সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন।
যাই হোক ধর্মপাল পাল বংশীয় শ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মানুরাগী ছিলেন এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বিক্রমশীলা মহাবিহার ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয়। তাঁর চেষ্টায় ওদন্তপুরী মহাবিহার ও সোমপুরি মহাবিহার নামে আরো দুটি মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধধর্মাবলম্বি হলেও ধর্মপাল হিন্দুদের প্রতি যথেষ্ট উদার ছিলেন। তার সময়ে বাংলার সংস্কৃতি জগতের এক ব্যাপক পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .